Saturday, May 16, 2020

গতকালের অভিজ্ঞতা

কাল অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়েছিলাম একজন পরিচিতাকে ডিসচার্জড করিয়ে আনতে। হাসপাতালে থাকাকালীনই মা ফোন করে জানালো যে বাড়িতে থানার বড়বাবু এসেছিলেন, আমি না থাকায় ফেরার পর থানায় দেখা করতে বলে গেছেন।

হাসপাতাল থেকে ফিরলাম ৫ঃ৩০ নাগাদ। তারপর বীজপুর থানার বড়বাবুকে ফোন করাতে, উনি ৬ টা নাগাদ থানায় আসতে বললেন। যথাসময়ে থানায় পৌছালাম এবং বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম, সঙ্গে ছিল অর্পিতা। ৬ঃ৪৫ এ বড়বাবু আসলেন এবং আমি ভিতরে ঢুকলাম।

আমাকে দেখেই বড়বাবুর মেজাজ সপ্তমে। আমি নাকি দাঙ্গাবাজ (শব্দটা পরিচিত লাগছে কি?)। আমি, আমার স্বভাব অনুযায়ী, খুবই শান্তভাবে জানতে চাইলাম ওনার এরকম সার্টিফিকেট প্রদানের কারণটা কি। ওনার বক্তব্য যে তেলেনিপাড়া নিয়ে আমি নাকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভগ্ন করেছি। আমি গোলা মানুষ, ব্যাপারটা ঠিক আমার কাছে পরিস্কার হলনা। জানতে চাইলাম যে উনি কি বলতে চাইছেন যে তেলেনিপাড়ার ঘটনায় রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয়েছে? এতে উনি আরও তেতে উঠলেন এবং বললেন যে, তেলেনিপাড়ার ঘটনায় নয়, সেটা নিয়ে আমার করা পোস্টে সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে। এই কথা শুনে আমি তো আর ঠাঁই পাইনা, ঘটনাতে যদি সম্প্রীতি নষ্ট না হয়, তাহলে সেটা নিয়ে বলাতে নষ্ট হয় কেমন করে? এই প্রশ্ন করাতেই উনি মেজাজ হারালেন আর বললেন যে উনি আমার ফোন সিজ করবেন আর আমার কথাবার্তা ভিডিও রেকর্ড করে, আমাকে জেলে ঢুকাবেন। এরপর উনি জানতে চাইলেন যে ভিডিও গুলি আমি নিজে শুট করেছি কিনা। নঞর্থক উত্তর দেয়ায় উনি ওগুলো ডিলিট করতে বলতেন। এরও উত্তর নঞর্থক হওয়ায় উনি জানতে চাইলেন যে আমি ওগুলো কোথা থেকে পেয়েছি। উত্তরে আমি পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিলাম যে সেটা আমি জানাবনা। আমি পোস্ট করেছি, সব দায় আমার। উনি যদি গ্রেপ্তার করতে চান, তাহলে যেন আজকেই করেন কারণ কাল কোর্ট থেকে জামিনের বিষয়ে আমি নিশ্চিত। তাছাড়া রবিবার আর সোমবার আমাকে বেহালা আর হালিসহরে ত্রাণ বিতরণ করতে যেতে হবে। "আপনার মত দাঙ্গাবাজকে আমি আমার এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতেই দেবনা", চিৎকার করে উঠলেন তিনি। আমিও, আমার স্বভাব অনুযায়ী, শান্তভাবেই জানালাম, ত্রাণ তো আমি দেবই, পারলে উনি রুখে দেখান।

নিজেকে বেশ একটা কেউকেটা গোছের মনে হচ্ছিল কিন্তু সেই প্রলোভন দমন করেই ওনাকে বললাম যে ফালতু ফোন নিয়ে লাভ নেই কারণ আমার টাইমলাইন সম্পূর্ণ পাব্লিক, নিজেরাই দেখে নিতে পারবেন আর যে যে ভিডিও নিয়ে ওনার আপত্তি আছে, সেগুলো তো আমি নিজেই ওনাকে ফরওয়ার্ড করে দিতে পারি। অতঃপর, আরেকটা ঘরে গেলাম আর খোলা হল আমার ফেসবুক। গত দু'মাসের পোস্ট ঘেঁটেও ওনারা উত্তেজক কোন লেখা পেলেন না। বরং ওনার সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ওনাকে জানালেন যে, "স্যার, উনি তো অনেক ভাল ভাল কাজই করেছেন। গুজরাট থেকে ট্রেনও নিয়ে এসেছেন।" (সত্যি বলছি, আমি যে গুজরাট থেকে ট্রেন এনেছি, এটা আমি নিজেও জানতাম না)।

এই শুনে বড়বাবু বললেন যে আমার যখন এতটাই পরিচিতি আছে যে "ট্রেন চালাতে পারি", তাহলে খামোখা এরকম সাম্প্রদায়িক পোস্ট কেন করি। দুটোরই কারণ এক - আমি বললাম। আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে আপনার কি মনে হয়, আমি উদ্যোগ না নিলে সরকার গুজরাট থেকে ট্রেন চালাতনা? নিশ্চয়ই চালাতো, হয়তো আরও দু'দিন পরে। আমি ঘটনাটা নিয়ে লেগে থাকায়, কাজটা একটু আগে হয়েছে। ঠিক একইভাবে, তেলেনিপাড়ার হিংসা নিয়ে আমার পোস্ট ফেসবুক ও ট্যুইটারে ভাইরাল হওয়ার পরেই সরকার এলাকার সংশ্লিষ্ট অধিকারীর সাথে, আরও অধিকারীকে এলাকার দায়িত্ব দিয়েছেন। উত্তরে বড়বাবু জানালেন যে তেলেনিপাড়ার ক্ষেত্রে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটাই তো উনি জানতেন না। "সেটা আপনার দুর্ভাগ্য"- আমি বললাম কিন্তু আপনি জানতেন বলে তো আর বাস্তব বদলাবে না!

এরইমধ্যে বড়বাবুর ফোনে তাঁর কোন উচ্চতর আধিকারিক ফোন করলেন এবং আমাকে ফোন দিতে বললেন। সেই অধিকারী আমাকে বললেন যে ওনার সাথে তো আমার পরিচয় আছে, কথাবার্তাও হয়। তাহলে এরকম যে ঘটনা থানায় ঘটছে, সেটা ওনাকে জানাইনি কেন? আমি বিনীতভাবে জানালাম যে আইনকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য আর সেটাই করছি। ব্যক্তিগত কারণে খামোখা ওনাদের বিরক্ত করতে আমার ইচ্ছা হয়নি। তারপর উনি বড়বাবুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেন, বড়বাবুর মুখের অভিব্যক্তি দেখে আন্দাজ করতে পারলাম যে কি কথা হলো।

ইতিমধ্যে ঘন্টা দেড়েক সময় কেটে গেছে। আমি এবার সরাসরি বললাম যে আপনি কি আমাকে গ্রেপ্তার করছেন? যদি করেন, তাহলে আমার স্ত্রী বাইরে গাড়িতে বসে আছেন, ওনাকে দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি পৌছে দেবেন। উত্তরে উনি প্রায় লাফিয়ে উঠলেন আর বললেন, না স্যার, এখন তো গ্রেপ্তার করার প্রশ্নই উঠছেনা। আমি তাহলে যেতে পারি, জিজ্ঞাসা করলাম। ওনার সদর্থক উত্তর পেয়ে বেরোতে যাবো তখন উনি পিছন থেকে বললেন যে বাইরে একটা কুকুর বাঁধা আছে, একটু সাবধানে যাবেন। আমি বললাম, জানি, ওর নাম 'হান্ড্রেড' তো? ও আমাকে খুবই ভালবাসে। তারপর ওনার অভিব্যক্তি দেখার অপেক্ষা না করেই বেরিয়ে আসলাম আর 'হান্ড্রেড' যথারীতি আদর খাওয়ার জন্যে লাফিয়ে উঠলো। তারপর ওকে একটু আদর করে, থানা থেকে বেরিয়ে আসলাম।

No comments:

Post a Comment