Sunday, May 24, 2020

বিবেকের ডাক


স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটার অভ্যাসটা আজকের নয়, বহুদিনের। সেভেনে পড়াকালীন, সালটা ১৯৯০, সিপিএমের সূর্য তখন মধ্যআকাশে, ক্লাসে মহাপুরুষের ছবি হিসাবে লেনিনের ছবি লাগানোর বিরোধিতা করে বা টেরেসার সেবার আড়ালে ধান্ধাবাজীর কথা প্রকাশ্যে বলে ABTA-র সদস্য মাস্টারমশাইদের কাছে অপ্রিয় হয়েছি। SFI-র ডাকা বনধের দিনে স্কুলে উপস্থিত হয়ে বনধ সফল করতে স্কুলে উপস্থিত থাকা পুরসভার চেয়ারম্যানের সাথে ঝগড়া করে বহু নেতার কাছে অপ্রিয় হয়েছি। কিন্তু বিবেকবোধকে বিসর্জন দিয়ে কখনও স্রোতে গা ভাসানোর সহজ খেলায় যোগ দেইনি।
সেদিনও দেইনি, আজও দেবনা। আজ যারা ভাবছে মোদী মোদী করলেই জেহাদি সমস্যা মিটে যাবে সেই স্তাবকদের সাথে আমি একমত নই। স্তাবকরা নিজেদের দায় এড়াতে, জয়ধ্বনি দিয়েই ক্ষান্ত হতে পারে, কিন্তু আমি পারিনা। এই ধারার স্তাবকতা তখনও দেখেছি যখন বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন সঙ্ঘ পরিবারের সাথে যুক্ত থাকার ফলে পরিবারের সদস্যদের উল্লাস, স্তাবকতা আর হাঁফ ছেড়ে বাঁচার মানসিকতা খুব কাছের থেকে দেখেছি। বিকাশ পুরুষ আর লৌহ পুরুষের যুগলবন্দী নিয়ে চর্চা চুপ করিয়ে দিয়েছিল বহু অপ্রিয় প্রশ্ন। জহরলাল নেহরুর পরে জম্মু ও কাশ্মীরের হিন্দুদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করার জন্যে দায়ী বাজপেয়ীকে প্রশ্ন করার ক্ষমতা ছিলনা স্তাবকদের। কিন্তু চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়। ২০০৪ সালে বিকাশ পুরুষের সরকার পতনের পরেই উঠতে লাগলো প্রশ্ন। লৌহ পুরুষের জিন্না বয়ান বা গুজরাটের দাঙ্গা (যা আদতে হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই ছিল) কেন্দ্রীয় সরকারের উপর একটা কুৎসিত দাগ জাতীয় বক্তব্য আরও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিল।

কিন্তু মজার কথা হল যে, প্রশ্নগুলির উত্তর না পেয়েই ২০০৯ সালে সেই লৌহ পুরুষকেই তথাকথিত হিন্দুত্ববাদীরা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করলো। অর্থাৎ যে ব্যক্তিকে দল চালানোর অযোগ্য মনে করে দলের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল তাকেই দেশ চালানোর যোগ্য হিসাবে মনোনীত করা হলো। কিন্তু দেশের লোক সেই বিশ্বাসঘাতকে তাদের নেতা হিসাবে গ্রহণ করলো না, আর ২০০৪ থেকে নিম্নমুখী হওয়া বিজেপির গ্রাফ আরও নেমে গেল।
২০১৪ সালে মোদীর নেতৃত্বে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত যাকে ইংরেজিতে বলে more compulsion than choice। ২০০২ পরবর্তী সময়ে মোদীর যে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়েছিল তারই প্রতিফলন ঘটে ২০১৪ ও ২০০৯ সালের ভোটে। সেই লোকসভা নির্বাচন ছিল মোদীর, বিজেপি নয়, বাকিদের লড়াই। সারাজীবন সেকুলারদের (পড়ুন মুসলিম তোষণবাদীদের) চাপে বিপর্যস্ত হওয়া হিন্দু জনতা মনপ্রাণ ঢেলে আশীর্বাদ করে নির্বাচন করলো মোদী সরকার। কিন্তু এত বড় দেশের দায়িত্ব কি একজনের পক্ষে সামলানো সম্ভব? তারও কি ভুলচুক হতে পারে না? সেক্ষেত্রে সেটা ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব কার? স্তাবকরা সেটা করবেনা কারন তাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু নিহিত স্বার্থ আছে কিন্তু যারা জেহাদি শক্তিকে দমন করার জন্যে মোদীকে নির্বাচিত করেছেন তাদের কাছে মোদী লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য পূরণের অস্ত্র মাত্র। সেই অস্ত্রে যদি মরচে ধরে বা ধার কমে যায় তাহলে সেটাকে শোধন করার অধিকার প্রত্যেক হিন্দুর আছে। তাই আমি মোদীর হিন্দু স্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে যদি স্তাবকদের গায়ে জ্বালা ধরে তাহলে আমি নিরুপায়।

স্তাবকরা তাদের যুক্তিহীনতা ও মেধাগত দৈন্যদশার প্রেক্ষিতে আমার বা আমার সংঠনের অবস্থানকে, তাদের সহজ যুক্তিতে একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথে জুড়ে, আত্মতুষ্টি লাভ করতে পারে বা যে নেতার খিদমতগারি করছে, তার সুনজরে পড়ার উপায় মনে করতে পারে, কিন্তু সেটাতে বাস্তবটা বদলাবেনা। যে #আত্মদীপ বা বিবেকের মত অনুসারে এতদিন কাজ করে এসেছি, এখনও তাই করবো। মমতা ব্যানার্জী বহুদিন থেকেই আমাকে পশ্চিমবঙ্গে, ওনার ভাষায়, "দাঙ্গাবাজ" বলে চিহ্নিত করে এসেছেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে, তাঁর অন্যতম স্তাবক, রাজ্যের তদানীন্তন পুলিশ প্রধান এবং বর্তমানে অবসরভাতা হিসাবে রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদ প্রাপ্ত, সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ কে দিয়ে এই মর্মে সাংবাদিক সম্মেলনও করিয়েছিলেন যে আমিই নাকি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক গুজব ছড়ানোর মূল পান্ডা। খবরে নামটা প্রকাশ না করলেও ইঙ্গিত স্পষ্ট।

তবে ২০১৭ সালে সেই ঢাকঢোল পিটিয়ে করা ঘোষণার পরে, তিন বছরের বেশী সময় কেটে গেলেও, মমতা ব্যানার্জীর প্রশাসন জেহাদিদের নিয়ন্ত্রণ করতে আজও সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাই আজও ঘটে চলে আসানসোল, টিকিয়াপাড়া বা তেলেনিপাড়া আর প্রশাসন রেশন পৌছে দিয়ে আসে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্তর বাড়িতে পাছে 'দুধেল গাই' রা সপাটে লাথি মারে। তাই ধুলাগড় দাঙ্গার পরে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অধিকর্তা, সব্যসাচী রমন মিশ্র কে সেই পদ থেকে সড়িয়ে দেয়া হলেও, তেলেনিপাড়ার পরেও হুমায়ুন কবীর নিজের পদে দিব্যি বহাল রয়েছেন। দিদি যাঁর "ফাইনাল গাজি" বই উদ্বোধন করেন, তাঁর সাতখুন মাফ না হোক, তেলেনিপাড়া তো মাফ হতেই পারে।

আগেই বলেছি যে স্রোতের সাথে সাঁতার কাটতে সবাই পারে কিন্তু আমার কাছে বিবেকটা অনেক বেশী মূল্যবান। তাই তাদের পছন্দ হোক আর নাই হোক, প্রশাসনকে আয়না দেখানোর কাজটা চালিয়েই যাবো। বর্তমানে প্রশাসনে কর্মরত বা অবসরভাতা প্রাপ্ত কিছু ব্যক্তি, চেয়ারের জোরে, নিজেদের ঈশ্বর বলে ভাবতেই পারেন আর সেই ভাবনার বশীভূত হয়ে আমার মত সাধারণ নাগরিকদের, অন্যায়ভাবে, গ্রেপ্তার করাতেই পারেন কিন্তু দিনের শেষে, আদালতে তাদের নিজেদেরই মুখ পোড়ে। জনগণের কাছে নিজেদের প্রহসনে পরিণত করেন। অতএব, যে যাই বলুক আর যে যাই করুক, #আত্মদীপের আলোতে, আমার মেয়ে সহ হিন্দুদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যাতে অসভ্য আরবী সংস্কৃতির ভার বহন করতে না হয়, বোরখা পরতে না হয়, সেই লড়াই জারী থাকবে।

https://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/tighten-screw-on-social-media-rumour-mongering-cm-to-dgp/articleshow/57195139.cms

No comments:

Post a Comment