Friday, February 21, 2020

মহা শিবরাত্রি


আমরা, বাঙালীরা, শ্রীকৃষ্ণকে পূজো করি কিন্তু যোদ্ধা রূপকে নয়, প্রেমিক রূপকে। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ যেখানে মাত্র ১০ বয়সে বৃন্দাবন ছেড়ে যাবার পর আর ওমুখো হননি, সেখানে আমরা নিজেদের ঘাটে যাবার বয়সেও প্রেমরস আর বাৎসল্য রসে নিজেদের এমন জারিত করে রাখলাম যে চক্রধারীর পূজো করার আর সময় পেলাম না। যুদ্ধ করার দম আমাদের নেই, তাই চক্রধারীও আমাদের পূজ্য নয়।

যোগীশ্বর মহাদেবকেও আমরা আমাদের সুবিধা অনুসারে এক গোলগাল নাদুসনুদুস চেহারায় কল্পনা করে নিয়ে সারা জীবন তার মাথায় জল ঢেলে পূন্য কামিয়ে গেলাম। তাঁর দোহাই দিয়ে শুধু নেশাকেই জাস্টিফাই করে গেলাম। যোগীরাজ হিসাবে পূজো করলে আর তার মত হতে হলে যেহেতু কষ্ট করতে হবে, ঘাম ঝড়াতে হবে তাই এই সহজ সমাধান।

একইভাবে গণেশের ক্ষেত্রেও তাঁর পাণ্ডিত্য ও শত্রুদের প্রতি তাঁর নির্মম মানসিকতাকে অগ্রাহ্য করতে আমরা তাকে এক বোকাসোকা চরিত্র হিসাবে কল্পনা করে নিলাম। আমাদের গণেশ শত্রুবিনাশি নয়, বড়বাজারের গদিতে, তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বসে থাকা এক চর্বির পাহাড় মাত্র। তাই কাউকে 'গোবর গণেশ' বলে আমরা আত্মপ্রসাদ অনুভব করি।

আত্মপরিচয় বিসর্জন দিয়ে, সেকুলার সাজার ভুত আমাদের এমনভাবে গ্রাস করেছে যে ইদানীং আমরা, থীমের বাহানায়, মা দুর্গাকেও অস্ত্র বিহীন করে দিয়েছি। অশুভকে ধ্বংসের জন্যে যে শক্তির সৃষ্টি, তাঁকেও আমরা, নিজেদের মত, শক্তিহীন করে দিয়েছি।

যতদিন না পর্যন্ত আমরা আমাদের উপাসিত দেবী-দেবতাদের প্রকৃত রুপকে অর্চনা করতে শিখবো, তাদের সেই রূপকে নিজেদের ব্যবহারিক জীবনে আনতে শিখবো, ততদিন আমরা যতই পূজো করিনা কেন, ঈশ্বরের কৃপাদৃষ্টি লাভ করবনা। তাই আমাদের শাস্ত্রে বলেছে, 'শিবং ভূত্বাঃ শিবং যজেৎ" অর্থাৎ শিবের উপাসনা করার জন্যে শিবের মতই হওয়া উচিত।

সবাইকে মহাশিবরাত্রির শুভেচ্ছা জানাই।

No comments:

Post a Comment