Sunday, April 11, 2021

শিরোনামে বিশ্বভারতী

আবারও শিরোনামে বিশ্বভারতী। আবারও শিরোনামে সেখানকার কুখ্যাত উপাচার্য, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারা গেছে যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কার্যকলাপের ফলে, স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে, বিশ্বভারতীর উপাচার্য এবং তাকে নিয়োগকারী, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এতটাই তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে যে বোলপুর আসনে বিজেপি প্রার্থী, ডঃ অনির্বাণ গাঙ্গুলী পক্ষে স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে জয়লাভ করা অত্যন্ত কঠিন। অতএব, এখন বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে দিল্লীতে তলব করা হয়েছে এবং বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রারের থেকে সিনিয়রমোস্ট ব্যক্তিদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন হয়তো বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেয়া হবে বা লম্বা ছুটিতে পাঠানো হবে এবং অন্য কেউ দায়িত্ব নেবেন।

অথচ এরকম পরিস্থিতি তৈরীই হতনা যদি কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম থেকেই পরিস্থিতির সঠিক পর্যালোচনা করে, উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতেন। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী কোনদিনই বিজেপি বা সঙ্ঘপরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেননা। তিনি বরাবরই একজন ধান্ধাবাজ। কর্মক্ষেত্রে মহিলা সহকর্মীকে যৌন নির্যাতনের দোষী প্রমাণিত হওয়া এই ব্যক্তিকে বিশ্বভারতীর মত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়া ছিল মোদী সরকারের প্রথম ভুল। তথাকথিত পাঁচিল ভাঙা থেকে শুরু করে মেলার মাঠে পাঁচিল দেয়ার সিদ্ধান্ত, বিশ্বভারতীর বিভিন্ন এলাকায় ১২ ফুটের পাঁচিল তোলা থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের টাকা আটকে রাখা - এই সবই ছিল বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মত একজন আত্মকেন্দ্রিকের ব্যক্তিগত ইগো জাহির করার ফল। আমি এই বিষয়ে গত আগস্ট মাস থেকে এই ফেসবুকেই লিখেছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের ট্যাগ করে ট্যুইট করেছি, এমনকি বিজেপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে ব্যক্তিগতভাবেও জানিয়েছি কিন্তু আফসোসের বিষয় হল যে তারা তখন পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিদ্যুৎ তাদের বুঝিয়েছিল যে তার এই কাজে যারা ক্ষুব্ধ হচ্ছে তারা কম্যুনিস্ট বা আর্বান নকশাল আর বিজেপি নেতৃত্বও সেই কথা বিশ্বাস করে এতদিন চুপ করে বসেছিল।

আমি নিজে দুই বার শান্তিনিকেতনে গিয়েছি এবং এলাকার বিভিন্ন প্রান্ত চষে ফেলেছি। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে আমার কখনও মনে হয়নি যে তাদের ক্ষোভের পিছনে কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ কাজ করেছে। যেটা তাদের প্রকৃতই ক্ষুব্ধ করেছে সেটা হল উপাচার্যের নেতৃত্বে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য ও নান্দনিকতার গণহত্যা। শিক্ষক, কর্মী, বিদ্যার্থী, রবীন্দ্রপ্রেমীদের নিয়ে একযোগে সিদ্ধান্ত নেয়ার যে পরম্পরা বিশ্বভারতীতে ছিল, যে উন্মুক্ততা শান্তিনিকেতনের পরিচয় ছিল, নিজের ধান্ধা চালানোর জন্যে সেটার মূলেই আঘাত করেছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মত অযোগ্য ব্যক্তি। এই প্রসঙ্গে আমার বিভিন্ন পোস্টে ও ফেসবুক লাইভে বিশদে জানিয়েছি। আগ্রহী ব্যক্তিরা সেগুলি দেখে নিতে পারেন।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার যে আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। আদালতের রায়ে মনে হয়েছে যে ন্যায় প্রতিষ্ঠার থেকে, একটা বিশেষ পক্ষের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আদালত যে ভূমিকা নিয়েছেন এবং কমিটির সদস্য হিসাবে যাদের মনোনীত করেছেন তাদের পূর্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে, তাদের মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। এমনকি গত ২৪শে নভেম্বর, আত্মদীপ-এর দায়ের করা ইন্টারভেনশন মামলায়, যেখানে আমরা খোদ বিশ্বভারতী আইনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছি, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেন যে কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে এবং শুনানির দিন হিসাবে ১২ই জানুয়ারি ধার্য্য করা হয় অথচ কোন এক অজ্ঞাত কারণে, ১২ই জানুয়ারির সেকেন্ড হাফে বেঞ্চ বসেই না। এরপর হঠাৎই ১৫ই জানুয়ারি ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেন যে ১৮ই ডিসেম্বর নাকি কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে, প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কমিটির প্রধান ততদিনে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বদলি হয়ে গেছেন, এবং মামলার ফয়সালা হয়ে গেছে বলে জানান। অর্থাৎ আমাদের ফাইল করা ইন্টারভেনশন পিটিশনের মেরিট বিচার না করেই, কেবলমাত্র যেন কিছু বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে গঠিত কমিটির রায় আপ্তবাক্যের মত মেনে নেয়া হলো।

এইসব অন্যায়ের প্রতিফলনই আজ বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী, অনির্বাণ বাবুকে পেতে হচ্ছে। অনির্বাণ বাবু নিঃসন্দেহে একজন যোগ্য ব্যক্তি কিন্তু বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মত একজন ধান্ধাবাজের সঙ্গে তার সখ্যতা এবং বারবার বলা সত্ত্বেও তাকে উপাচার্য পদে রেখে দেয়ার প্রভাব তার রাজনৈতিক পথকে প্রভাবিত করতে পারে। আজ যদি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে সেই পদ থেকে সরানোও হয় তাহলেও আমি বলবো যে, বড্ড দেরী হয়ে গেছে।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10157875928109865&id=620989864

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10157814418494865&id=620989864

No comments:

Post a Comment