Friday, March 26, 2021

সুমহান গণতন্ত্র

পশ্চিমবঙ্গের ৩০ টা বিধানসভা কেন্দ্রের সচেতন জনতা আগামীকাল ভোট শেষ হতেই আবার শীতঘুমে চলে যাবেন। পাঁচ বছর অন্তর, একটা বোতাম টিপেই তাদের সামাজিক দায়িত্ব শেষ। এরপর না তাদের এলাকায় হেলিকপ্টার নামবে আর না তাদের বাড়ি কোন নেতা খেতে যাবেন। কালকের পরে তাদের অবস্থা হবে ব্যবহৃত কন্ডোমের মত। আজ অবধি কন্ডোম ডটেড না ফ্লেভার্ড - এই নিয়ে যত আলোচনাই হোক না কেন, ব্যবহারের পরে তার মূল্য শূন্য। 

আর জনগণই বা কি করেন, তারা নিজেদের রোজনামচা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যা অন্যদিকে নজর দেয়ার সময় কোথায়? বাচ্চার পড়াশোনা, পরিবারের খাদ্য, বস্ত্র আর বাসস্থানের যোগার, ভবিষ্যতের সঞ্চয় ইত্যাদি বিষয়ে তারা এতটাই নিয়োজিত যে এর বাইরে ভাবার সুযোগই নেই। অথচ নেতানেত্রীদের দেখুন, তাদের কেউ অর্থকষ্টে আছে বলে মনে করেন? না তাদের রেশন তুলতে হয়, না লাইন দিয়ে জল নিতে হয়, না দুর্যোগের পরে ত্রাণ নেয়ার জন্যেও ঘুষ দিতে হয়। সত্যি কথা বলতে তারা আমাদের ভাল করার জন্যে এতটাই নিবেদিতপ্রাণ যে ৩০,০০,০০০ টাকার বেশী শুধু খরচ করবেন যাতে আমরা তাদের সেবা করার সুযোগটুকু দেই। আর সেখানেও এত প্রতিযোগিতা যে কেবা আগে প্রাণ করিবেক দান, তার লাগি তাড়াতাড়ি!

আমাদের মহান দেশের সুমহান গণতন্ত্র, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক বলে আমাদের গর্বের অন্ত নেই কিন্তু সেই গণতন্ত্রে প্রকৃত জনগণের ভূমিকা ঠিক কতখানি? একটু ভেবে দেখুন, ভেড়ার পাল থেকে কি কিছুমাত্র আলাদা? রাখাল যেদিকে নিয়ে যাবে, পাল সেদিকেই যাবে। এই মহান গণতন্ত্রে আপনি কি চান, সেটা বড় কথা নয়, আসল কথা হলো আপনাকে বিশ্বাস করানো যে আপনি আসলে কি চাইছেন। তাই নির্বাচন আসলে কেউ বাসন মেজে দেয়ার অফার দেন বা কেউ বিনা নিমন্ত্রণেই বাড়িতে এসে পাত পেড়ে খেয়ে যান, কেউ ভাঙা পা দেখিয়ে সহানুভূতি চান তো কেউ কর্মীদের লাশের কথা বলে, কিন্তু ভাবুন তো আপনাদের পরিবারের কারুর পা ভাঙলে আপনারা কতজন কলকাতার নামজাদা হাসপাতালে ভর্তি ও হাসপাতাল অবধি গ্রীন করিডোরের সুবিধা পান? যারা নিজেদের কর্মীদের লাশ দেখিয়ে সহানুভূতি চাইছেন, তারা কিভাবে নিজেদের কর্মীদের খুনের অভিযুক্তকে নিজেদের দলে যায়গা দেন?

আসলে আমার দেশের নির্বাচন মানে হল আপনার পাঁচ বছরের ক্ষোভ, শান্তিপূর্ণ উপায়ে, বের করে দেয়ার উপায় মাত্র। বিগত পাঁচ বছরে যে যাই করুক, ভোট মিটলেই আবার সব শূন্য থেকে শুরু হবে। তাই নেতা-নেত্রীরা অনায়াসেই জামার রঙ পালটে পাপমুক্ত হয়ে যেতে পারেন আর আমরাও আমাদের নতুনভাবে সান্ত্বনা দেই যে এবার থেকে সব ভাল হবে।

ভারতের গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক।

No comments:

Post a Comment