Sunday, December 12, 2021

বামপন্থা

না, বামপন্থীদের নিয়ে আমার কোন ছুৎমার্গ নেই বরং আমি মনে করি যে দক্ষিণপন্থীদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্যে বামপন্থীদের থাকার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। এটা ভুলে যাওয়া চরম ভুল হবে যে বামপন্থার জন্ম হয়েছিল কালের নিয়মে, ক্ষমতাসীন দক্ষিণপন্থীদের শোষণমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অস্ত্র হিসাবে। তাই যতদিন দক্ষিণপন্থা থাকবে, সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যে, ততদিন বামপন্থাও বেঁচে থাকবে।


বামপন্থীদের নামকরণ নিয়ে নানারকম মত প্রচলিত আছে, যার মধ্যে, আইনসভাতে তাদের স্পিকারের বাম দিকে বসার উল্লেখও আছে কিন্তু আমার মনে হয় এটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুতে দেয়ার মতো কারণ তারা আইনসভাতে বসার আগেই নিজেদের আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছিল আর সেই কারণেই তারা নির্বাচিত হয়েছিল। আমার ধারণা অনুসারে, সমাজের অধিকাংশ মানুষের যেহেতু ডান হাত বেশী সক্ষম, বাম হাতি মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম, তাই প্রথাগত ধারণা ও কাজের বাইরে আলাদা পরিচয় স্থাপন করার জন্যেই বামপন্থী পরিচয় তৈরী হয়েছে।


হ্যাঁ, এবার অনেকেই ভারতে সিপিএম, সিপিআই বা বিদেশের চেসেস্কু থেকে পল পটের উদাহরণ দিয়ে বামপন্থার খারাপ দিক তুলে ধরতে পারেন কিন্তু আমার কাছে এই খারাপ হওয়ার মূল কারণ হলো ক্ষমতা লাভ। যেকোন রাজনৈতিক দলের আদর্শকে দূষিত করে দেয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া। বামপন্থা স্বভাবগতভাবে হলো ক্ষমতাসীনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার অঙ্কুশ কিন্তু এই অঙ্কুশ যখন নিজেই ক্ষমতায় বসে যায় তখন তার ব্যবহার হয়ে যায় শূন্য। ফলে সেটাতে জং ধরতে বাধ্য। নকশালরা কখনও ক্ষমতায় বসেনি তাই তাদের আদর্শের প্রতি, আচরণের বিচ্যুতির কথা বলছিনা, এখনও অনেকে শ্রদ্ধাশীল। এমনকি SUCI এর মত একটা ছোট্ট সংগঠনের প্রতি তাদের যা ভরসা আছে সেটা ক্ষমতায় থেকে কলুষিত সিপিএমের প্রতি আর আসবেনা।


এই কারণেই আমি বামপন্থা আর কম্যুনিজমকে এক করে দেখিনা। বামপন্থা একটা শক্তি যেটার প্রয়োজন আছে। এবার ইলেকট্রিক বলতে কেউ যদি শুধু ইলেক্ট্রিক চেয়ার বোঝেন তাহলে আমি অসহায়।

No comments:

Post a Comment