শক্তির আরাধনা
পুঞ্জীভূত ক্রোধ আর লাগামহীন হিংসা – এই দুইয়ের সম্মিলিত ফল হল নগ্ন ত্রাস যা সন্ত্রাসসৃষ্টিকারীদের মনে এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করে যে তারা অস্ত্র ফেলে করুণার ভিক্ষা চাইতে বাধ্য হয়। শত অনুনয় আবেদনেও যে আসুরিক শক্তি তাদের হিংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত হয়না, তাদের প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় হল তাদের মনে প্রতিবর্ত ত্রাসের সৃষ্টি করা। হ্যাঁ, এই শিক্ষাই জগজ্জননী তার মাকালী রূপে আমাদের দিয়েছেন কিন্তু আমরা তাঁর দেয়া শিক্ষা ভুলে, মূর্খের মত শুধু তাঁর পূজা করে যাচ্ছি।
পুরাণ অনুযায়ী, মাকালী হলেন মাদূর্গারই ভিন্ন রুপ। পানিণির মতে কালী শব্দটি হল সংস্কৃত শব্দ কালম্-র স্ত্রী রুপ। সংস্কৃতে কালম্ শব্দটির দ্বারা কালো (রঙ) আর কাল (সময়) দুইই বোঝায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর এইটি প্রামাণ্য সংস্কৃত গ্রন্থ, শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে “কালঃ শিব। তস্য পত্নোতী কালী।“ অর্থাৎ, মাকালীর সাথে সময়ের একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক্য রয়েছে। আর সেই সময়ের দাবী মেনেই অসুর রক্তবীজের বধ করার জন্যেই মা-এর আবির্ভাব।
রক্তবীজ ছিল অসুররাজ শুম্ভ ও নিশুম্ভের সেনাপতি। সে একবার মহাদেবের কঠোর তপস্যা করে। তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব আবির্ভূত হন এবং তাকে বর দিতে চান। রক্তবীজ তখন তাঁর কাছে তাকে অমরত্ব লাভের প্রার্থণা করে। দেবাদিদেব যখন কোন জাগতিক ব্যক্তিকে অমরত্ব দানে তাঁর অসামর্থতার কথা জানান, তখন রক্তবীজ মহাদেবের কাছে কৌশলে এক বর লাভ করে যাতে যেখানে তার রক্তবিন্দু মাটিতে পরবে, সেখান থেকেই যেন নতুন রক্তবীজের জন্ম হয়। এই বর লাভ করে রক্তবীজ কার্যতঃ অজেয় হয়ে ওঠে। তাই শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করার জন্যে দেবী দূর্গা যখন চামূন্ডা রূপে আবির্ভূত হয়ে তাদের সেনাপতি রক্তবীজের সাথে লড়াই করেন তখন বারবার রক্তবীজকে পরাস্ত করা সত্বেও, তাকে বধ করতে পারেন না। রক্তবীজের দেহের প্রতিটি রক্তবিন্দু মাটিতে পড়তেই সেখান থেকে নতুন রক্তবীজের জন্ম হয় এবং অগণিত রক্তবীজ দ্বারা যুদ্ধক্ষেত্র ভরে যায়।
রণক্লান্ত দেবী ক্রমেই অনুভব করেন যে চিরাচরিত পদ্ধতিতে লড়াই করে এই আসুরিক শক্তিকে জয় করা সম্ভব নয়। আর রক্তবীজকে পরাস্ত না করতে পারলে শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করে পুনরায় দৈব শাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। তখন তিনি শালীনতার গণ্ডি অতিক্রম করে এক নগ্ন এবং ভয়ঙ্করদর্শনা নারীর রুপ ধারন করলেন এবং রক্তবীজের বংশকে আক্রমণ করলেন। আসুরিক শক্তির পূনঃর্জন্ম রোধ করতে দেবী প্রতিটি রক্তবীজকে বধ করে তার রক্ত মাটিতে পরার আগেই সেই রক্ত পান করে নিতে লাগলেন এবং ক্রমে এইভাবে রক্তবীজের বংশকে ধ্বংস করলেন।
হিন্দুশাস্ত্রগুলি ভাল করে অধ্যায়ন করলেই বোঝা যাবে অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করতে স্বয়ং ঈশ্বরও বহুবার সভ্যতা ও শালীনতার গণ্ডী অতিক্রম করেছেন। জগজ্জননীর মাকালীরূপে রক্তবীজকে বধ করা যদি একটি দৃষ্টান্ত হয় তাহলে আরেকটি হল ভগবান বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার। হিরণ্যকশিপুর মত আসুরিক শক্তিকে পরাজিত করা কোন কোমল মানবিকতা সম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব ছিলনা। তাই হিরণ্যকশিপুকে বধ করার জন্যে ভগবান নৃসিংহ – যার মধ্যে মানুষ ও পশু, দুই স্বত্বাই বর্তমান - রূপে আবির্ভুত হলেন।
বর্তমানে হিন্দুরা তাদের বাড়িতে বা পাড়ায় বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করে চলেছে, রাস্তায় মন্দির দেখলে প্রণামী দিচ্ছে বা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সদস্য হয়ে আধ্ম্যাতিক মুক্তির পথ খুঁজছে কিন্তু, মুশকিল হল, তারা তাদের দেব-দেবীদের দেয়া মৌলিক শিক্ষাটাকে কক্ষনোই আত্মস্থ করেনি। তাই শক্তির উপাসনা ছাড়াই ভক্তির উপাসনা করতে শুরু করেছে। হিন্দুদের তেত্রিশ কোটি দেব-দেবীর মধ্যে এমন একজনও দেবতা নেই যার হাতে কোন অস্ত্র নেই অথচ তাদের উপাসকরা কত অনায়াসে সেই অস্ত্রকে উপেক্ষা করে দেবতাদের আরাধনা চালিয়ে যেতে লাগলো।
এর পরিণতিতে যা হওয়ার তাই হল। যে জেহাদি আসুরিক শক্তিকে অস্ত্রের দ্বারা অঙ্কুরেই বিনাশ করা দরকার ছিল, তাকে আবার বাড়তে দেওয়া হল। আর আমাদেরকে সেকুলারিজমের স্তোতবাক্য দিয়ে ভুলিয়ে রাখা হল। কিন্তু তা যে ছিল নিছকই আত্মপ্রবঞ্চনা, রক্তের মূল্যে তা আমরা বুঝতে পারলাম ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট। এই আত্মপ্রবঞ্চনা আর কতদিন চালাবো ? বাংলার বাকী মাটিটুকু যতদিন না যাবে? আজ জেলায় জেলায় গ্রাম বাংলায় কান পাতলে হিন্দুর পায়ের নিচে মাটি খসার আওয়াজ আবার শোনা যাচ্ছে। বর্ধমানে খাগড়াগড়ের আওয়াজটা একটু জোর হয়ে গেছে। ওই জেহাদি শক্তিকে শুধু নির্মম শক্তি দিয়েই ধংস করা যাবে - এই শিক্ষা দিতেই মা কালির এই উগ্র রণচন্ডি রূপ। মা কালির সেই রূপেরই সাধনা মায়ের সন্তানদের করতে হবে - শুধু পূজার আসনে বসে নয়, বাস্তব জীবনে।
পুঞ্জীভূত ক্রোধ আর লাগামহীন হিংসা – এই দুইয়ের সম্মিলিত ফল হল নগ্ন ত্রাস যা সন্ত্রাসসৃষ্টিকারীদের মনে এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করে যে তারা অস্ত্র ফেলে করুণার ভিক্ষা চাইতে বাধ্য হয়। শত অনুনয় আবেদনেও যে আসুরিক শক্তি তাদের হিংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত হয়না, তাদের প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় হল তাদের মনে প্রতিবর্ত ত্রাসের সৃষ্টি করা। হ্যাঁ, এই শিক্ষাই জগজ্জননী তার মাকালী রূপে আমাদের দিয়েছেন কিন্তু আমরা তাঁর দেয়া শিক্ষা ভুলে, মূর্খের মত শুধু তাঁর পূজা করে যাচ্ছি।
পুরাণ অনুযায়ী, মাকালী হলেন মাদূর্গারই ভিন্ন রুপ। পানিণির মতে কালী শব্দটি হল সংস্কৃত শব্দ কালম্-র স্ত্রী রুপ। সংস্কৃতে কালম্ শব্দটির দ্বারা কালো (রঙ) আর কাল (সময়) দুইই বোঝায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর এইটি প্রামাণ্য সংস্কৃত গ্রন্থ, শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে “কালঃ শিব। তস্য পত্নোতী কালী।“ অর্থাৎ, মাকালীর সাথে সময়ের একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক্য রয়েছে। আর সেই সময়ের দাবী মেনেই অসুর রক্তবীজের বধ করার জন্যেই মা-এর আবির্ভাব।
রক্তবীজ ছিল অসুররাজ শুম্ভ ও নিশুম্ভের সেনাপতি। সে একবার মহাদেবের কঠোর তপস্যা করে। তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব আবির্ভূত হন এবং তাকে বর দিতে চান। রক্তবীজ তখন তাঁর কাছে তাকে অমরত্ব লাভের প্রার্থণা করে। দেবাদিদেব যখন কোন জাগতিক ব্যক্তিকে অমরত্ব দানে তাঁর অসামর্থতার কথা জানান, তখন রক্তবীজ মহাদেবের কাছে কৌশলে এক বর লাভ করে যাতে যেখানে তার রক্তবিন্দু মাটিতে পরবে, সেখান থেকেই যেন নতুন রক্তবীজের জন্ম হয়। এই বর লাভ করে রক্তবীজ কার্যতঃ অজেয় হয়ে ওঠে। তাই শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করার জন্যে দেবী দূর্গা যখন চামূন্ডা রূপে আবির্ভূত হয়ে তাদের সেনাপতি রক্তবীজের সাথে লড়াই করেন তখন বারবার রক্তবীজকে পরাস্ত করা সত্বেও, তাকে বধ করতে পারেন না। রক্তবীজের দেহের প্রতিটি রক্তবিন্দু মাটিতে পড়তেই সেখান থেকে নতুন রক্তবীজের জন্ম হয় এবং অগণিত রক্তবীজ দ্বারা যুদ্ধক্ষেত্র ভরে যায়।
রণক্লান্ত দেবী ক্রমেই অনুভব করেন যে চিরাচরিত পদ্ধতিতে লড়াই করে এই আসুরিক শক্তিকে জয় করা সম্ভব নয়। আর রক্তবীজকে পরাস্ত না করতে পারলে শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করে পুনরায় দৈব শাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। তখন তিনি শালীনতার গণ্ডি অতিক্রম করে এক নগ্ন এবং ভয়ঙ্করদর্শনা নারীর রুপ ধারন করলেন এবং রক্তবীজের বংশকে আক্রমণ করলেন। আসুরিক শক্তির পূনঃর্জন্ম রোধ করতে দেবী প্রতিটি রক্তবীজকে বধ করে তার রক্ত মাটিতে পরার আগেই সেই রক্ত পান করে নিতে লাগলেন এবং ক্রমে এইভাবে রক্তবীজের বংশকে ধ্বংস করলেন।
হিন্দুশাস্ত্রগুলি ভাল করে অধ্যায়ন করলেই বোঝা যাবে অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করতে স্বয়ং ঈশ্বরও বহুবার সভ্যতা ও শালীনতার গণ্ডী অতিক্রম করেছেন। জগজ্জননীর মাকালীরূপে রক্তবীজকে বধ করা যদি একটি দৃষ্টান্ত হয় তাহলে আরেকটি হল ভগবান বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার। হিরণ্যকশিপুর মত আসুরিক শক্তিকে পরাজিত করা কোন কোমল মানবিকতা সম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব ছিলনা। তাই হিরণ্যকশিপুকে বধ করার জন্যে ভগবান নৃসিংহ – যার মধ্যে মানুষ ও পশু, দুই স্বত্বাই বর্তমান - রূপে আবির্ভুত হলেন।
বর্তমানে হিন্দুরা তাদের বাড়িতে বা পাড়ায় বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করে চলেছে, রাস্তায় মন্দির দেখলে প্রণামী দিচ্ছে বা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সদস্য হয়ে আধ্ম্যাতিক মুক্তির পথ খুঁজছে কিন্তু, মুশকিল হল, তারা তাদের দেব-দেবীদের দেয়া মৌলিক শিক্ষাটাকে কক্ষনোই আত্মস্থ করেনি। তাই শক্তির উপাসনা ছাড়াই ভক্তির উপাসনা করতে শুরু করেছে। হিন্দুদের তেত্রিশ কোটি দেব-দেবীর মধ্যে এমন একজনও দেবতা নেই যার হাতে কোন অস্ত্র নেই অথচ তাদের উপাসকরা কত অনায়াসে সেই অস্ত্রকে উপেক্ষা করে দেবতাদের আরাধনা চালিয়ে যেতে লাগলো।
এর পরিণতিতে যা হওয়ার তাই হল। যে জেহাদি আসুরিক শক্তিকে অস্ত্রের দ্বারা অঙ্কুরেই বিনাশ করা দরকার ছিল, তাকে আবার বাড়তে দেওয়া হল। আর আমাদেরকে সেকুলারিজমের স্তোতবাক্য দিয়ে ভুলিয়ে রাখা হল। কিন্তু তা যে ছিল নিছকই আত্মপ্রবঞ্চনা, রক্তের মূল্যে তা আমরা বুঝতে পারলাম ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট। এই আত্মপ্রবঞ্চনা আর কতদিন চালাবো ? বাংলার বাকী মাটিটুকু যতদিন না যাবে? আজ জেলায় জেলায় গ্রাম বাংলায় কান পাতলে হিন্দুর পায়ের নিচে মাটি খসার আওয়াজ আবার শোনা যাচ্ছে। বর্ধমানে খাগড়াগড়ের আওয়াজটা একটু জোর হয়ে গেছে। ওই জেহাদি শক্তিকে শুধু নির্মম শক্তি দিয়েই ধংস করা যাবে - এই শিক্ষা দিতেই মা কালির এই উগ্র রণচন্ডি রূপ। মা কালির সেই রূপেরই সাধনা মায়ের সন্তানদের করতে হবে - শুধু পূজার আসনে বসে নয়, বাস্তব জীবনে।
No comments:
Post a Comment