Sunday, December 1, 2019

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে পৃথক রাখার পরিণতি

সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (CAB) আওতা থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে বাদ দিতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তারমানে, এই সাতটি রাজ্যে বসবাসকারী কোন হিন্দু শরণার্থীই, প্রস্তাবিত নতুন আইন অনুসারে, ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। পাকিস্তান থেকে আগত শরণার্থীরা দিল্লী, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা সহ বিভিন্ন রাজ্যে নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য হলেও, বঞ্চিত হবে কেবল বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীরা, মানে বাঙালীরা। তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল হবে পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন বাকি রাজ্যগুলিতে বাঙালীরা অপাংতেয় - persona non grata।

২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে, আসামের বরাক উপত্যকায় নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশ থেকে আগত সব শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদান করবে তাঁর সরকার। ক্ষমতায় আসলেও, পাঁচ বছরের কার্যকালে সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেননি মোদী সরকার। আজ দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত হওয়ার পর যখন সেই প্রতিশ্রুতি রূপায়ণের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তখন সেই আসামকেই বিলের আওতা থেকে বাদ দিতে চলেছেন মোদী সরকার। এটা শুধু এক দেশ, এক আইন তত্ত্বের বিরোধী নয়, একইসাথে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের চাপের সামনে নতজানু হওয়া নির্লজ্জ তোষণ।

এই তোষণেরই আরেকটা পরিণতি হল ILP মানে ইনার লাইন পারমিট। ১৮৭৩ সালের Bengal Eastern Frontier Regulation (BEFR) এর দোহাই দিয়ে, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডে চালু হতে চলেছে ILP। সেই রাজ্যগুলিতে প্রবেশ করার জন্যে নিতে হবে পারমিট। পারমিট দুই প্রকার - ১) ১৫ দিনের জন্যে, যা ১৫ দিন পরে এক বার রিনিউ করা যাবে এবং ২) ৬ মাসের জন্যে যা দুই বার একই সময়সীমার জন্যে রিনিউ করা যাবে। তবে ৬ মাসের পারমিট পেতে হলে স্থানীয় কোন বাসিন্দার অনুমোদন লাগবে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার পরে, সেখানে জমি কিনতে চাওয়া ব্যক্তিরা এই বিষয়ে কি বলেন, সেটা জানার অপেক্ষায় রইলাম।

এই BEFR মানার অর্থ হল যে এই তিনটে রাজ্যে ১৮৭৩ সালের আগের লিগ্যাসি ছাড়া, স্থানীয় উপজাতি বিহীন, আর কেউ থাকতে পারবেনা। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশে উপজাতি নয় এমন জনসংখ্যা যথাক্রমে ৬১,০৯১, ২,৬৭,৫২৯ এবং ৪,৩১,৯০৬ জন। এখন এই রাজ্যগুলির দাবী মেনে কেন্দ্র সরকার যদি BEFR বলবৎ করার সম্মতি দেন তাহলে এই বিপুল জনসংখ্যা নিজ নিজ রাজ্যে 'বিদেশী' বলে বিবেচিত হবে আর তাদের অনিবার্য গন্তব্য হবে আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর ও মেঘালয়। মিজোরামের প্রায় ৩৫,০০০ জন রিয়াং বা ব্রুস ১৯৯৭ সাল থেকে ত্রিপুরার শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে কারণ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মিজোরা তাদের মিজোরামের বাসিন্দা বলে স্বীকার করেনা।

আগামীদিনে, এই একই পরিণতি হতে চলেছে ঐ রাজ্যগুলির বিশাল জনসংখ্যার। নির্বাচনী গণিতের হিসাবে, ঐ তিন রাজ্যের দাবী যদি সরকার মেনে নেয় আর ঐ তিন রাজ্যের উদ্বাস্তু জনসংখ্যাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাকি চারটে রাজ্যে পুনর্বাসন দেয়ার খাতিরে, CAB থেকে সেই রাজ্যগুলিকে পৃথক রেখে বাঙালী শরণার্থীদের সাথে বঞ্চনা করে, তাহলে সেটা হবে বিশ্বাসঘাতকতার সমতূল্য। পাকিস্তানে অত্যাচারিত হিন্দু শরণার্থীরা সহজে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে আর বাংলাদেশে অত্যাচারিত হিন্দুরা, কেবল তাদের বাঙালী পরিচয়ের জন্যে, সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে - এটা ধর্ম নয়। মোদী সরকার যদি নির্বাচনী লাভের জন্যে এই অধার্মিক কাজ করেন, তাহলে ভবিষ্যৎ তাঁকে কখনও ক্ষমা করবেনা।

https://nenow.in/north-east-news/no-cab-in-northeast-amit-shah.html

https://eisamay.indiatimes.com/nation/amit-shah-indicates-that-assamese-language-will-be-states-language-of-assam/articleshow/72317898.cms

http://eastwindjournal.com/2019/11/30/citizenship-amendment-bill/

No comments:

Post a Comment