Wednesday, April 29, 2020

পরিযায়ী শ্রমিক


বারবার যে কথা বলেছি, যে কথা বলার জন্যে মমতা ব্যানার্জীর অফিশিয়াল পেজে কমেন্ট ডিলিট হয়ে গেছে, সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি, মাননীয় সলিসিটর জেনারেল, যে প্রস্তাবকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন অবশেষে সেটাই বাস্তবায়িত হতে চলেছে। হ্যাঁ, ভিনরাজ্যে বসবাসকারী, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজেদের ঘরে ফেরার অনুমতি এবং সেই সূত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করার অনুমতি দিলেন কেন্দ্রীয় সরকার।

লকডাউনের প্রথম পর্যায় থেকেই, গুজরাট, পাঞ্জাব, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন রাজ্যে আটক শ্রমিকদের সাথে কথা হচ্ছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে, #আত্মদীপ-এর পক্ষ থেকে তাদের ত্রাণের ব্যবস্থাও করেছি কিন্তু সাথে এটাও বুঝেছি যে সেটা যথেষ্ট নয়। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, Men can't live on bread alone আর এইসব পরিযায়ী শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে, সেই উপলব্ধিটা বারবার হয়েছে। বিনা কাজে, ভিন রাজ্যের এক যায়গায়, দীর্ঘদিন ধরে আটক থাকলে সেটার যন্ত্রণা কতটা, সেটা অনুভব করেছি তাদের সাথে কথা বলে। এরসাথে আছে খাবারের স্বল্পতা। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে লকডাউনের প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনগুলির মধ্যে যে উদ্যম ছিল, লকডাউনের সীমা যত বেড়েছে ততই কমেছে সেই উদ্যমের মাত্রা।

এমতাবস্থায়, পরিযায়ী শ্রমিকদের, নির্দিষ্ট পরীক্ষা সাপেক্ষে, ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা হওয়া উচিত ছিল প্রতিটা সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য। কিন্তু অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করা এই শ্রমিকদের না আছে উঁচু মহলে যোগাযোগ আর না আছে ভোটব্যাঙ্ক হওয়ার মত পরিকাঠামো। এমতাবস্থায়, কখনও দিল্লীর আনন্দ বিহারে, কখনও মহারাষ্ট্রের বান্দ্রায় আবার কখনও গুজরাটের সুরাটে জমায়েত হয়েছে ঘরে ফিরতে আকুল শ্রমিকদের। ঘরে ফিরতে পারবে এই আশায়, গুজবের ফাঁদে পা দিয়ে পুলিশের মার খেয়েছে তারা। তাদের উপর ছেটানো হয়েছে কীটনাশক। তবে, অবশেষে যে সরকার তাদের কষ্ট উপলব্ধি করে, তাদের ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, এটা যথেষ্টই আনন্দের খবর। আশা করি, প্রতিটা শ্রমিক, সুস্থভাবে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবেন। হাজার হোক, বাড়ি তো বাড়িই। লকডাউনে বাড়িতে আটক থেকে যারা বাড়ির মর্ম উপলব্ধি করতে পারছেন না, তারা কখনও, সম্ভব হলে, এদের থেকে জেনে নেবেন বাড়ির মূল্য কতটা।

No comments:

Post a Comment