Saturday, April 25, 2020

মনের জোর

শাস্ত্রে বলে, 'যাদৃশী ভাবনা যস্য, সিদ্ধির্ভবতী তাদৃশী", মানে যার যেরকম চিন্তাভাবনা, সে সেরকমই ফল লাভ করে। মানুষেরই মনই, আদতে, মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্তর্জলিযাত্রায় চলে যাওয়া ব্যক্তিও পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আরে শুধু মনের জোরে। তাই 'নিয়তি কেন বধ্যতে?' মানে নিয়তিকে কে ঠেকাতে পারে এই প্রশ্নের উত্তর হল 'মনসাঃ', মানে মনের জোর।

এই প্রসঙ্গে রমন মহর্ষির জীবনের একটা ঘটনা বলার লোভ সামলাতে পারছিনা। রমন মহর্ষি সম্পর্কে বিশদে জানতে আগ্রহীরা গুগল করতে পারেন। যাই হোক, একবার মহর্ষির হাতে একটা অস্ত্রোপচার করতে হবে। তাঁকে অপারেশন টেবিলে শুইয়ে অ্যানাসথেশিয়া দিতে গেলে, তিনি সেটা নিতে অস্বীকার করেন। ডাক্তারকে বলেন যে বিনা অ্যানাসথেশিয়াতেই অপারেশন করতে। ডাক্তার তাঁকে বলেন যে সেক্ষেত্রে প্রচন্ড যন্ত্রণা হবে, যেটা সহ্য করা অসম্ভব। কিন্তু মহর্ষি জিদ ধরে থাকেন যে অ্যানাসথেশিয়া নেবেন না। অবশেষে ডাক্তার তাঁর জিদের কাছে হার মানেন এবং অপারেশন করতে রাজী হন। 

মহর্ষি অপারেশন টেবিলে শোওয়ার পর, ডাক্তার তাঁর চামড়ার একটু যায়গা কাটতেই মহর্ষি যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠেন। আর তাঁর চিৎকার শুনে ডাক্তারও ডবল জোরে তাঁকে ধমকে ওঠেন। বলেন, "আপনাকে এতবার বললাম অ্যানাসথেশিয়া নিতে, তবুও আপনি নিলেন না, আর এখন ব্যথায় চিৎকার করছেন?" ডাক্তারের কথা শুনে মহর্ষি অল্প হেসে তাঁকে বলেন, "আরে ডাক্তার, তুমি যে অপারেশন শুরু করছো, সেটা তো বলবে। নাও, এবার করো", বলে তিনি শুয়ে পড়লেন আর ডাক্তার অ্যানাসথেশিয়া ছাড়াই গোটা অপারেশন করলেন।

অপারেশন শেষ হলে, ড্রেসিং করার পর, ডাক্তার মহর্ষিকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, "এত প্রচন্ড যন্ত্রণা আপনি সহ্য করলেন কিভাবে, যোগব্যায়ামের মাধ্যমে?" শুনে মহর্ষি বললেন, "আমার তো এতটুকুও যন্ত্রণা বোধ হয়নি, তাহলে সহ্য করার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?" শুনে ডাক্তার তো অবাক। বললেন, "তাহলে প্রথমবার আপনি ঐ সামান্য কাটায় চিৎকার করলেন যে"!! "তখন তো ব্যথা লেগেছিল, কারণ আমার মন প্রস্তুত ছিলনা", মহর্ষি বললেন, "পরেরবার যখন অপারেশন করো, তখন আমি প্রস্তুত ছিলাম আর আমার মনকে ঐ স্থান থেকে অন্য যায়গায় নিয়োজিত করেছিলাম"।

এরকম ঘটনা আমাদের সাথেও হামেশাই ঘটে। একটা মশার কামড়ে আমরা হামেশাই বিরক্ত হয়ে যাই কিন্তু খুব আগ্রহ নিয়ে যখন আমরা কোন বই পড়ি বা সিনেমা দেখি, তখন মশা কামড়ে বসে থাকলেও আমরা খেয়াল করিনা। পাশে বসে থাকা অন্য কেউ যখন সেটার দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তখন আমরা সেটার অনুভূতি লাভ করি। এটাই মনের ক্ষমতা।

তাই লকডাউনের মধ্যে, ঘরের মধ্যে আটক অবস্থায় বিরক্ত না হয়ে, মনের ডানা মেলে দিন। দেহটা চার দেয়ালের মাঝে থাকলেও, মনের তো এমন কোন বাধা নেই। এই ফাঁকে মনের ডানায় ভর করে ঘুরে আসুন কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। একবার ঢুঁ মেরে নিন দুর্গাপূজার প্যান্ডেলগুলিতে। গোটা বাড়ি সাজিয়ে ফেলুন দীপাবলির আলোতে। দেখুন, ভাল লাগবে।

No comments:

Post a Comment