Sunday, April 12, 2020

তিক্ত অভিজ্ঞতা


ভিন রাজ্যে আটক বাঙালীদের জন্যে ত্রাণের ব্যবস্থা করার কাজ করতে গিয়ে দু'টো তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো, যা একেবারেই অনভিপ্রেত ছিল।

১) গতকাল একটা অচেনা নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পেলাম যে পাঞ্জাবের ফতেগড় সাহেব অঞ্চলে ৫ জনের একটা একটা পরিবার আটকে আছে।
মেসেজে লেখা ছিল যে "ওরা চরম বিপদে পড়েছে। খাবারদাবার কিচ্ছু নেই। ওদের বাঁচান"। এরকম মেসেজ পেয়ে, স্বাভাবিকভাবেই বিচলিত হয়ে, পাঞ্জাবের টিমের সাথে যোগাযোগ করলাম। টিমের লোকজন সেই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান যে ঐ মেসেজ তাঁরা ৫-৬ দিন আগে করেছিলেন। এখন তাঁদের কাছে খাবার আছে। তাঁরা এখন শুধু বাড়ি ফিরতে চান। লকডাউনের মধ্যে সেটা অসম্ভব বলে আমি টিম লিডারকে বিভ্রান্তিকর খবর দেয়ার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। এরপর যে ব্যক্তি সেই মেসেজ পাঠিয়েছিলেন, তাঁকে ফোন করলে তিনি জানান যে তিনি ঐ মেসেজ নাকি ৫-৬ দিন আগে কোন গ্রুপে পেয়েছিলেন। তিনি আমাকে ফেসবুকে ফলো করেন। এখন ফেসবুকে আত্মদীপ-এর কাজ দেখে, আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি ফোন করার পরে তিনি নিজের পাঠানো মেসেজটি ডিলিট করে দেন।

২) গতকালই আমার পরিচিত কলকাতার এক ব্যবসায়ী জানান যে সুরাটে তাঁর পরিচিত প্রায় ২০-২২ জন শ্রমিক ফেঁসে আছে।
তাঁরা খাবার পাচ্ছেনা। আমি সহযোগিতার আশ্বাস দিলে ওখান থেকে একজন ফোন করেন এবং জানান যে তাদের কাছে খাবার, টাকাপয়সা কিচ্ছু নেই। কন্ট্রাক্টরের সাথেও যোগাযোগ হচ্ছেনা। তাঁরা যেখানে আছেন, স্থানীয় লোকদের আপত্তির ফলে, সেখান থেকে বের হতেও পারছেন না। ঘটনার বিবরণ শুনে গুজরাটে পরিচিত লোকেদের সাথে যোগাযোগ করি। তাঁরা জানান যে রাজ্য সরকারের নির্দেশানুসারে, কন্ট্রাক্টররা তাদের কর্মচারীদের দায়িত্ব নিতে বাধ্য। তিনি কন্ট্রাক্টরের নম্বর চান। আমি সেই ফেঁসে যাওয়া ব্যক্তিদের থেকে কন্ট্রাক্টরের নম্বর নিয়ে তাদেরকে দিলে, তাঁরা সরাসরি কন্ট্রাক্টরের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাকে সরকারি আদেশানুসারে কাজ করতে বলেন। সেই কথোপকথনের স্ক্রিনশটও তাঁরা পাঠান। এর কিছুক্ষণ পরেই আবার একটা মেসেজ আসে যেখানে কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে সেই শ্রমিকদের কথা রেকর্ড করা রয়েছে। সেই মেসেজে শ্রমিকরা বলেছেন যে তাদের কাছে খাবার রয়েছে, গত পরশুদিন কন্ট্রাক্টরের দেয়া ৩০০০ টাকাও আছে। তাদের নাকি গ্রামের বাড়ি থেকে বলা হয়েছিল এরকম বলতে, তাই তাঁরা আমার কাছে ওরকম বলেছেন। এরপর আমার আর কিছু বলার মুখ থাকেনা। আমি এবারও তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হলাম। কিন্তু এরপরেও তাঁরা জানালেন "এরকম তো হতেই পারে। এরপরেও যদি কোন যায়গায় প্রয়োজন হয়, নিঃসঙ্কোচে তাঁদের জানাতে"। আমি তাঁদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে, অডিও ক্লিপটা সেই ব্যবসায়ী ভদ্রলোককে পাঠিয়ে দিলাম।

এমতাবস্থায় সবার কাছে অনুরোধ করছি আমাদের ক্ষমতা সীমিত, তাই দয়া করে, ভুল খবর দিয়ে, সেই ক্ষমতাটুকুর অপব্যবহার করবেন না। ভুল খবরের পিছনে দৌড়ে সময় ও এনার্জি খরচ করার মত বিলাসিতা আমরা এবং আমাদের পরিচিত ব্যক্তিরা দেখাতে পারবনা। তাই যেখানেই যা শুনলেন বা দেখলেন, সেটা নিয়ে ১০১% নিশ্চিত নাহলে, খামোখা ট্যাগ বা মেসেজ করবেন না। আপনারা নিশ্চয়ই চাননা যে ভুল খবরের পিছনে ছুটতে গিয়ে, আমরা প্রকৃত প্রয়োজন আছে যার, এমন কাউকে সেবা দিতে বঞ্চিত হই।


No comments:

Post a Comment