Monday, April 13, 2020

ধার্মিক

বর্তমানে "ধার্মিক" বলতে এমন একজনকে যে বুঝায় যে পৃথিবী রসাতলে গেলেও সারাদিন পূজাআর্চাতেই ব্যস্ত থাকেন। নিজের শ্রদ্ধার ঠাকুরের সেবাতেই তার নিবেদিত প্রাণ। বিগ্রহের মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজে পেয়ে, তার সেবায় যে সর্বদা নিয়োজিত থাকে, সেই আজকে ধার্মিক। 

কিন্তু ধর্ম মানে কি শুধুই পূজাআর্চা আর ঈশ্বরভক্তি? ঈশ্বরে অবিশ্বাসী অথবা ঈশ্বরে বিশ্বাসী হলেও পূজার মত রিচুয়ালে অবিশ্বাসী কেউ কি ধার্মিক হতে পারেনা? সেটাই যদি হবে, তাদের নির্জীব পদার্থের ধর্ম থাকে কেমন করে? ছোটবেলায় পদার্থবিজ্ঞানের সেই অধ্যায় মনে করুন যেখানে লেখা ছিল যে "জলের সমোচ্চশীলতা ধর্মকে কাজে লাগিয়েই শহরের উঁচু উঁচু বাড়িতে জল সরবরাহ করা হয়"। জল তো পূজা করেনা, তাহলে তার ধর্ম হল কিভাবে? আগুনের ধর্ম হলো তাপ দেয়া, বায়ুর ধর্ম হল শুষ্ক করা, এগুলো কোনটাই তো ঈশ্বরভক্তির সাথে যুক্ত নয়, তাহলে ধর্ম হল কিভাবে?

সনাতন ধর্মে, প্রকৃতপক্ষে, ধার্মিক হওয়ার সাথে পূজার্চনা করার কোন বাধ্যবাধকতাই নেই। 'অহিংসা পরম ধর্ম, ধর্ম হিংসা তথৈব চ'- এর মধ্যে পূজার্চনার কথা কোথায়? ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, অটল বিহারি বাজপেয়ী যখন গুজরাটের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী, নরেন্দ্র মোদীকে 'রাজধর্ম' পালনের কথা বলেছিলেন, তখন কি তিনি মোদীকে পূজা করার কথা বলেছিলেন?

ধর্মর প্রকৃত অর্থ হল কর্তব্য। সনাতন ধর্মের অনুসারী মানে চিরন্তন কর্তব্যপালনে যারা অবিচল। এই কর্তব্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে হতে পারে এবং সম্পর্কভেদে এই কর্তব্যের মাত্রার বদল ঘটে। তাই বলা হয়েছে পিতৃধর্ম ও পুত্রধর্মের কর্তব্যের মাত্রা আলাদা। একই ব্যক্তি একই সাথে, সম্পর্কের মাত্রা অনুসারে যদি তার কর্তব্য পালন করে, তাহলেই সে প্রকৃত ধার্মিক। কোন ব্যক্তি যদি সারাদিনে একবার পূজার্চনা না করেও, তাঁর পরিবারের প্রতি, জাতির প্রতি সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি নিজের কর্তব্য পালন করে, তাহলেও সে ধার্মিক। আর এটাই ধর্মের সাথে রিলিজিয়নের পার্থক্য। এই কারণেই হিন্দুরা সনাতন ধর্মের অনুসারী, বাকি আব্রাহামিক রিলিজিয়নগুলির মত ধর্মভীরু নয়।

No comments:

Post a Comment