Friday, April 24, 2020

ফিডব্যাক

কথায় বলে, “রাজা কর্ণেন পশ্যতি”, অর্থাৎ, রাজা কান দিয়ে দেখেন। খুবই ন্যায্য কথা। কারন একা রাজার পক্ষে প্রতিদিন তাঁর গোটা রাজ্য ঘুরে প্রতিটি এলাকার খবর যোগার করা শুধু অবাস্তবই নয়, অসম্ভবও বটে। আর তিনি নিজে যদি প্রতিদিন যদি রাজ্যে ঘুরে বেড়ান তো শাসনকাজ কে চালাবে? এইজন্যেই রাজার পারিষদবর্গ থাকে, গুপ্তচর থাকে যারা রাজ্যের প্রয়োজনীয় খবর রাজার কাছে পৌছে দেয়। আর রাজা সেই খবর শুনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেন। 

এই ‘প্রয়োজনীয়’ কথাটা, ওই ইংরেজিতে যাকে বলে বেশ catchy। কোনটা প্রয়োজন আর কোনটা নয়, সেটা বিচার করবে কে? এই বিচার করার জন্যে রাজা যদি একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বানিয়ে দিয়ে থাকেন তাহলে ঝামেলা কম। কিন্তু সেটা না করে, রাজা যদি সেই দায়িত্ব পারিষদবর্গের হাতে ছেড়ে দিয়ে, নিজে শুধু শাসনকার্যে মনোনিবেশ করেন, তখনই হয় মুশকিল। প্রত্যেক পারিষদেরই নিজস্ব কিছু চাহিদা আর উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকে আর সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। রাজার দ্বারা স্থির করা কোন নিয়মের অবর্তমানে পারিষদরা অধিকাংশ সময় কেবল সেই খবরগুলিই রাজাকে দেয় যেগুলিতে তাদের ব্যাক্তিগত স্বার্থ জড়িত থাকে। ফলে অনেকসময়ই রাজা প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে একেবারেই অবহিত থাকেন না। এর পরিণতিতে রাজা আর প্রজার মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। 

গণতন্ত্রে দেশের রাজা আর তাঁর পারিষদবর্গের জায়গায় এসেছে, দেশের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী, আর তাঁদের মন্ত্রীসভা। প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী যত সক্ষমই হ’ন না কেন, তাঁর একার পক্ষে সারা এলাকা ঘুরে শাসনব্যবস্থা পর্যবেক্ষন করা ও জনসাধারনের মনের কথা বোঝা সম্ভব নয়। তাই তাঁকে স্বাভাবিক কারনেই তাঁর মন্ত্রীপরিষদের সহকর্মী তথা দলের উপর নির্ভর করতে হয়। এমতাবস্থায়, তিনি যদি সবসময় স্তাবকদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে থাকেন যারা ব্যাক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করার জন্যে তাঁকে ভুল খবর পরিবেশন করে বা তাঁর ভুলকেও সঠিক বলে বর্ণনা করে, তাহলে সেই রকম অযোগ্য পারিষদকে নির্বাচন করার দায় তাঁর। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে যে কে যোগ্য আর কে অযোগ্য সেটা প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী বুঝবেন কি ভাবে? আজকের দিনে, সোসাল মিডিয়ার কল্যানে, সেটা খুব একটা কঠিন কাজও নয়। নিজের বাছাই করা বিশ্বস্ত লোকেদের বিভিন্ন সোসাল মিডিয়া সেন্টারে বসিয়ে সরাসরি জনগনের পালস বোঝাটা আজকের দিনে খুব একটা কঠিন নয়। কিন্তু মুশকিল হ’ল, আজকের দিনে সেই সোসাল মিডিয়াতেও তো স্তাবকদের ভিড়। কোন বিরুদ্ধ মতের পোস্ট দেখলেই ‘কর্তাভজা’রা রে রে করে ছুটে আসে। 

তাহলে উপায়? উপায় একটাই। রাজহাঁস যেমন দুধ আর জল মিশিয়ে দিলে তার থেকে শুধু দুধটা খেয়ে নেয় আর জলটা পরে থাকে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীকেও বুঝে নিতে হবে কে স্তাবক আর কে হিতৈষী। কারন, সরকারটা তাঁর আর সেটার দায়িত্বও তাঁর।

No comments:

Post a Comment