Monday, March 16, 2020

বৌবাজার বিস্ফোরণের ইতিহাস

১৬ই মার্চ, ১৯৯৩ সালের মধ্যরাত, বম্বেতে উপর্যুপরি ১১টা বিস্ফোরণের ঠিক পাঁচ দিনে পরে, ঠিক একই ধাঁচের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো কলকাতার বৌবাজার। বাবরী মসজিদ ধ্বংসের বদলা নেয়ার প্রস্তুতি হিসাবে, কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর, লালবাজারের নাকের ডগায় গড়ে ওঠা রশিদ খানের অস্ত্রাগারের হদিশ রাখেনি পুলিশ। মার্কিন পুলিশের আগাম হুশিয়ারি থাকা সত্ত্বেও, দাউদ ইব্রাহিমের ১১ই মার্চ বম্বে আক্রমণ রুখতে ব্যর্থ হয় তৎকালীন কংগ্রেস সরকার। মহারাষ্ট্রের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী, সুধাকর রাও নায়েকের উপর রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থ করার স্বার্থে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী, শরদ পাওয়ার, সমুদ্র সীমার নিরাপত্তা শিথিল করে, অবাধে প্রবেশ করতে দেন RDX-এর মত বিস্ফোরক। আর সেই বিস্ফোরণের মাত্র পাঁচ দিন পরে, সারা দেশে যখন চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছে, তখনও রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তর, মহাকরণ আর কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর, লালবাজার থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে বসে, অবাধে নিজের কৌমের হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছিল দাউদের অনুচর, রশিদ খান।

হ্যাঁ, রশিদ খান, কলকাতায় আসলে যার আতিথ্য গ্রহণ করতেন ইউসুফ খান ওরফে দিলীপ কুমার থেকে সঞ্জয় দত্ত। সেই রশিদ খান যাকে 'ভাইজান' বলে ডাকতেন সায়রা বানু। সেই রশিদ খান যার দলবলকে নারীমাংস সরবরাহ করার দায়িত্ব ছিল গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির তদানীন্তন সভানেত্রী, শ্যামলী চক্রবর্তীর উপরে। সিপিএম আমলে তার কেশাগ্র স্পর্শ করবে এমন ক্ষমতা কলকাতা পুলিশের ছিলনা। আর কলকাতা পুলিশের তদানীন্তন নগরপাল, তুষার তালুকদার, যেখানে নিজের শয়নকক্ষে লেনিনের ছবি বাঁধিয়ে রাখেন, সেখানে তাঁর নেতৃত্বাধীন পুলিশ যে কতটা নিরপেক্ষ হবে সেটা সহজেই অনুমেয়।

মুহূর্তের অসাবধানতায় ঘটে যাওয়া বৌবাজার বিস্ফোরণে ৬৯ জন মারা গেলেও বেঁচে গিয়েছিলেন রাজ্যের কয়েক'শ মানুষ। সেই মঙ্গলবার যদি বিস্ফোরণ না ঘটতো তাহলে পরের জুম্মাবারেই হয়তো কেঁপে উঠতো কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশ আর বম্বের মতই নিহত হতেন শতাধিক মানুষ। বামফ্রন্ট নেতাদের ও কলকাতা পুলিশের একাংশকে রসেবশে রেখে, রশিদ খান নিজের কৌমের স্বার্থে যে ষড়যন্ত্র বুনেছিল সেটা বানচাল হয়ে যায় মুহুর্তের অসাবধানতায়।

No comments:

Post a Comment