Wednesday, January 6, 2021

সচেতন জনগণ

 প্রশাসন সবসময়ই স্থিতাবস্থায় বিশ্বাসী। ন্যায় বা অন্যায় বিচার করার দায়িত্ব বা মানসিকতা - কোনটাই প্রশাসনের থাকেনা। তার একমাত্র লক্ষ্য হল সমাজে অশান্তি তৈরী হতে না দিয়ে status quo বজায় রাখা। তাদের এই মানসিকতার ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই আক্রান্তরা বঞ্চিত হয়। সামান্য প্রশাসনিক প্রভাবে যে ন্যায় সে সহজেই পেতে পারতো সেটার জন্যে তাকে আইনি ব্যবস্থার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। আর ভারতের আইনি ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা তো এখন প্রায় Myth এ পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায়,  কোন রাজনৈতিক দল, বিরোধী পক্ষে থাকাকালীন সে যত বড়ই বিপ্লবী হোক না কেন, সরকারে গেলে প্রশাসনের এই নিয়ম মেনে নিতে বাধ্য হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রশাসনিক স্থবিরতা গ্রাস করে তাদের।


এই কারণে ক্ষমতায় কোন দল আছে সেটা আমার কাছে বড় কথা নয়, আসল কথা হল যে সেই দলকে দিয়ে নিজেদের কাজ করিয়ে নেয়ার সামর্থ্য সমাজের আছে কিনা! হ্যাঁ, এটা অস্বীকার করার কোন যায়গা নেই ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্ব যদি সমাজের দাবীর প্রতি সচেতন ও সহানুভূতিশীল হয় তাহলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়, যেমন হয়েছিল গোধরা পরবর্তী গুজরাটে। মনে রাখবেন, গুজরাটের দাঙ্গার সময় তদানীন্তন মোদী সরকার কিন্তু মোটেই জেহাদিদের আক্রমণ করেনি, পুলিশের গুলিতে নিহত হিন্দুদের সংখ্যা অনেক বেশী ছিল। কিন্তু সেই কাজটা করেছিল গুজরাটের সচেতন জনতা। মোদী প্রশাসন খালি, ক্ষেত্রবিশেষে, কিছুটা নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেছিলেন আর সেটাও করতে বাধ্য হয়েছিলেন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের মর্যাদা দেয়ার জন্যে। আপনাদের অনেকেরই জানা নেই যে একই ঘটনা ঘটেছিল নলিয়াখালী, বাদুরিয়া বা হাজিনগর দাঙ্গার সময়ে। যেটা আপনারা দেখেছেন সেটার বাইরে, পর্দার পিছনেও অন্য খেলা হয়েছে যেটা জানে এলাকার মানুষ আর প্রশাসনের বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তি। 

তাই ক্ষমতাসীন দলের গোত্র নিয়ে আমি ততটা উদ্বিগ্ন নই যতটা সেই দলকে সমাজের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্যে সামাজিক ক্ষমতা নিয়ে। আগামী নির্বাচনে অ্যাডভান্টেজ অবশ্যই বিজেপি কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসলেই 'অপুত্রকের পুত্র হবে আর নির্ধনের ধন, মর্তে অমৃতলাভ আর মরলে বৈকুন্ঠ গমন' - এটা আমি বিশ্বাস করিনা কারণ যে ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেই ঘটনাগুলির পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্যে প্রয়োজন সচেতন জনগণ। শুধু শাসকের বদল ঘটিয়েই যদি জনগণ আত্মতুষ্টিতে ভোগে তাহলে শাসনের বদল হওয়ার সম্ভাবনা কম। নতুন শাসকের সাথে জনগণের মধুচন্দ্রিমা পর্ব শেষ হওয়ার পরেই আবার নতুন করে ক্ষোভ আর অভিযোগের জন্ম হবে। এবার সিদ্ধান্ত আপনার যে আপনি সারাজীবন খালি অভিযোগ জানিয়েই কাটাবেন নাকি সেগুলি নিরসনের জন্যে উদ্যোগী ভূমিকা নেবেন।

No comments:

Post a Comment