Tuesday, January 19, 2021

কাশ্মীর ও পশ্চিমবঙ্গ

১৯৯০ সালের ১৯শে জানুয়ারি, আজ থেকে ঠিক তিন দশক আগে, আজকের দিনেই শুরু হয়েছিল কাশ্মীর থেকে পন্ডিত অর্থাৎ হিন্দু বিতাড়ন। এই প্রক্রিয়া চলেছিল ছয় মাসেরও বেশী সময় ধরে আর শেষ হিন্দু পরিবার কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল ২১শে জুন, ১৯৯০। উপত্যকায় হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়ার ফলে এই ঘটনা স্বাভাবিকই ছিল কিন্তু স্বভাবগতভাবেই বাস্তবকে অস্বীকার করা হিন্দুরা এই পরিণতি দেখতে চাননি, আর তাই দেখতে পাননি।

এই পরিকল্পিত বিতাড়ন শুরু হওয়ার বছর দুয়েক আগেও যদি কাশ্মীরি হিন্দুদের এই রকম পরিস্থিতির কথা বলা হতো, তাহলে তাঁরা সেটাকে পাগলের প্রলাপ বলেই উড়িয়ে দিতেন। তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারতেন না যে তাঁদের পিতৃপুরুষের সম্পত্তি, তাদের মাতৃভূমি তাঁদের ছাড়তে হবে, ঠিক যেমন ভাবতে পারেননি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের হিন্দুরা। মহাকালের সঙ্কেত বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তাঁরা কারণ তাঁদের ধার্মিক ও সামাজিক কাঠামো পরজীবন নিয়ে সচেতন করলেও ইহজীবন সম্পর্কে অজ্ঞ করে রেখেছিল। একইভাবে, কাংলাপাহাড়িতে দুর্গাপূজা, তেহট্টে সরস্বতী পূজা বা মহরমের জন্যে বিসর্জন বন্ধ হলেও আমরা নিজেদের চোখে মেকি ধর্মনিরপেক্ষতা পট্টি বেঁধে রাখি যাতে অপ্রিয় সত্যটার মুখোমুখি না হতে হয়।

দাঁড়ান, তেহট্ট, কাংলাপাহাড়ি আর বিসর্জন পড়েই গোটা পরিস্থিতিকে, আপন মনের মাধুরি মিশায়ে, একটা বিশেষ রাজনৈতিক রঙে রাঙিয়ে নেবেন না। মহরমের জন্যে বিসর্জন স্থগিতের ঝাড়খন্ডের রঘুবর দাস সরকারও করেছিলেন আর যোগী আদিত্যনাথের শাসনে কানপুরে দুর্গা মন্দিরও ভাঙা হয়েছিল। ১৯৯০ সালে কাশ্মীরে যখন হিন্দু বিতাড়ন চলছে, তখন কেন্দ্রে ছিল বিজেপি সমর্থিত, বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-এর জনতা দল সরকার। সঙ্ঘ পরিবারের নেতৃত্বে, দেশজুড়ে তখন চলছিল রাম মন্দির পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। কাশ্মীরে ছয় মাস ধরে হিন্দুদের উপর নির্যাতন ও বিতাড়ন চলতে থাকলেও সেটাকে না দেখার ভান করে, জোর দেয়া হয়েছিল রাম মন্দির আন্দোলনে। কারণটা স্পষ্টতই রাজনৈতিক। রাম মন্দির আন্দোলনের ফলে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ হয়েছিল তার সম্পূর্ণ সুবিধা পেয়েছিল বিজেপি। রাজীব গান্ধীর দুর্ভাগ্যজনক হত্যা না হলে হয়তো ১৯৯১ সালেই ক্ষমতা দখল করে নিত বিজেপি।

দেশের রাজধানী থেকে মাত্র ৭০০ কি.মি. দূরে, স্বাধীন ভারতে, কাশ্মীরি হিন্দুদের নিজভূমে পরবাসী হতে দেখেও নির্লিপ্ত ছিল প্রশাসন, নীরব ছিল রাজনৈতিক দলগুলি আর আপনি দিল্লী থেকে ১৫০০ কি.মি. দূরে বসে নিশ্চিন্ত হয়ে আছেন যে রাজনীতি আপনার রক্ষা করবে? তিরিশ বছর পার হয়ে গেছে, এখনও কাশ্মীরে ফেরত যেতে পারেনি পন্ডিতরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উদ্বাস্তুর জীবন যাপন করছেন তাঁরা। এখনও বহু পন্ডিত পরিবার দিল্লীর যমুনা পারের শিবিরে দিনযাপন করছেন। আমাদের গর্বের ভারতীয় সেনাও তাদের প্রত্যাবর্তন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেনা রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে। এরপরেও যদি আপনার মনে হয় শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটলেই এই রাজ্যে "আচ্ছে দিন" চলে আসবে তাহলে এই লেখাটা সেভ করে রাখুন, বছর তিনেক পরে এটা নিয়ে আলোচনা হবে।

No comments:

Post a Comment