Friday, January 29, 2021

মেরুকরণ

গত ২৪শে ডিসেম্বর, চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের প্রাক্তন কমিশনার, হুমায়ুন কবীরের একটা ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম যে নিজের কৌমের পাশে এভাবে প্রকাশ্যে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করার মত বুকের পাটা রাজ্যের কতজন হিন্দু IPS এর আছে। তেলেনিপাড়া দাঙ্গার সময় সম্পূর্ণ একপেশে ভূমিকা নেয়ার পরেও কেন হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হলনা, যেমন হয়েছিল ধুলাগড়ি দাঙ্গার পরে সব্যসাচী রমণ মিশ্রর ক্ষেত্রে, সেই প্রশ্নও তুলেছিলাম (লিঙ্ক নীচে)। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর, সম্ভবত, আজকে পেয়ে গেছি যখন হুমায়ুন কবীর নিজের প্রশাসনিক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন এবং খুব শিগগিরই তিনি হয়তো, তাঁর স্ত্রীর পথের শরিক হবেন এবং মুর্শিদাবাদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করবেন।

না, মমতা ব্যানার্জী বা তৃণমূলের প্রতি হুমায়ুন কবীরের কোন দুর্বলতা নেই, তাঁর একমাত্র লক্ষ্য নিজের কৌমের স্বার্থ রক্ষা করা। ২৪ তারিখে পোস্ট করা ভাষণটা শুনলে বুঝবেন যে তিনি বাংলার আকাশে কালো মেঘ দেখতে পারছেন। এখানে মেঘ বলতে যে বিজেপির উত্থান বোঝানো হচ্ছে সেটা বুঝতে পারার জন্যে মহাকাশ বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন হয়না। অতএব আগামী বিধানসভা নির্বাচন যে সম্পূর্ণভাবে মেরুকরণের পথে, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর হুমায়ুন কবীরদের জন্যে, এই মুহূর্তে, বিজেপি তথা মোদী-শাহকে রোখার একমাত্র অস্ত্র হলেন মমতা ব্যানার্জী। মিম বা ওয়েশীরা মুসলিম ভোট ভাগ করলে, সেটাতে আখেরে যে লাভ বিজেপিরই হবে সেটা The Last Gazi এর লেখকের অবোধ্য নয়। আর সেই কারণেই তিনি আজ ইস্তফা দিয়ে, সরাসরি রাজনীতির আসরে।

মেরুকরণের পথে হেঁটে নাহয় নির্বাচন হবে, মুসলিমদের অধিকার ও কৌমের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যে নাহয় হুমায়ুন কবীরের মত লোকেরা নিজেদের কেরিয়ার বিসর্জন দেবেন কিন্তু হিন্দুদের দিকেও কি ছবিটা একইরকম? নরেন্দ্র মোদীর ৩৭০ ধারা বাতিল করা বা রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা দেখে যারা এই বিজেপিকে হিন্দুদের অবলম্বন বলে ভাবছেন, সেই দলের রাজ্য নেতারা কি প্রকৃতই হিন্দুদের স্বার্থ ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে আগ্রহী বা যোগ্য? তাই যদি হবে তাহলে এবিপি আনন্দর যে অনুষ্ঠানে, দেবলীনা দত্ত প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে তিনি দুর্গাপূজার নবমীর দিন গোমাংস রান্না করে দেবেন, সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা, বিজেপির রাজ্য সভাপতি, দিলীপ ঘোষ, যিনি একদা হিন্দু জাগরণ মঞ্চের দায়িত্বেও ছিলেন, তিনি কেন তখনই সোচ্চার হলেন না? আমি দেবলীনা ও অনিন্দ্যর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ জানানোর পরে, বিজেপিরও বেশ কিছু আইনজীবীও এটা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন কিন্তু খোদ সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেও দিলীপ বাবু নীরব থাকলেন কেমন করে? সোচ্চার হতে বাধাটা কি ছিল, জ্ঞান নাকি সুশীল সাজার ইচ্ছা?

একটা কথা বিজেপির পরিস্কার মনে রাখা উচিত যে হিন্দুদের ভোট তাদের হাতের পাঁচ নয়। মেরুকরণের অঙ্ক তখনই সফল হবে যখন দুই দিকে তুল্যমূল্যের নেতা থাকবে। বিজেপি যদি ভাবে যে মমতা ব্যানার্জী প্রশাসনের দুর্নীতি আর সংখ্যালঘু তোষণ দেখেই মানুষ তাদের ভোট দিয়ে দেবে, তাহলে তাদের আরেকবার ভাবা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে যে মানুষ কিন্তু একটা বা দু'টো ইস্যুতে ভোট দেয়না, অনেক হিসাব তার সাথে জড়িয়ে থাকে। হিন্দু স্বার্থ ও সংস্কৃতি রক্ষা করার মত বিশ্বাসযোগ্য মুখ যতক্ষণ পর্যন্ত না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত না মেরুকরণের রাজনীতি সফল হবে, না দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শেষ হবে। আর এগুলো যদি শেষ না হয়, তাহলে দিনের শেষে কিন্তু অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল। 

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10158067901674865&id=620989864

No comments:

Post a Comment