Thursday, January 14, 2021

সেকুলার বিচার

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন যে "এদেশে সেই বুড়ো শিব বসে আছেন, মা কালী পাঁঠা খাচ্ছেন, আর বংশীধারী বাঁশী বাজাচ্ছেন। ঐ বুড়ো শিব ষাঁড় চড়ে ভারতবর্ষ থেকে একদিকে সুমাত্রা, বোর্নিও, সেলিবিস, মায় অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকার কিনারা পর্যন্ত ডমরু বাজিয়ে এককালে বেড়িয়েছেন, আর একদিকে তিব্বত, চীন, জাপান সাইবেরিয়া পর্যন্ত বুড়ো শিব ষাঁড় চরিয়েছেন, এখনও চরাচ্ছেন; ঐ যে মা কালী—উনি চীন, জাপান পর্যন্ত পূজা খাচ্ছেন, ওঁকেই যীশুর-মা মেরী করে ক্রিশ্চানরা পূজা করছে। ঐ যে হিমালয় পাহাড় দেখছ, ওরই উত্তরে কৈলাস, সেথা বুড়ো শিবের প্রধান আড্ডা। ও কৈলাস দশমুণ্ড-কুড়িহাত রাবণ নাড়াতে পারেননি, ও কি এখন পাদ্রী-ফাদ্রীর কর্ম!! ঐ বুড়ো শিব ডমরু বাজাবেন, মা কালী পাঁঠা খাবেন, আর কৃষ্ণ বাঁশী বাজাবেন—এ দেশে চিরকাল। যদি না পছন্দ হয়, সরে পড় না কেন? তোমাদের দু-চারজনের জন্য দেশসুদ্ধ লোককে হাড়-জ্বালাতন হতে হবে বুঝি? চরে খাওগে না কেন? এত বড় দুনিয়াটা পড়ে তো রয়েছে। তা নয়। মুরদ কোথায়?"।

মুরদ যে নেই সেটা কালীপূজা, ছট বা কার্ত্তিক পূজা উপলক্ষে বাজী ফাটানো বন্ধ করা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায় এবং একই আদালতের ক্রিস্টমাস ও নববর্ষ উদযাপনের সময় বাজী ফাটানো সম্পর্কিত কোন নিষেধাজ্ঞা জারি না করা নিয়েই স্পষ্ট। একই ঘটনা ঘটেছে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে, গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে। মহামান্য আদালত, গঙ্গাসাগরে ভক্তদের পুণ্যস্নানকে মহামারী পরিস্থিতিতে আপত্তিকর বলে মনে করলেও দীঘা, মন্দারমণি প্রভৃতি এলাকায় নিয়মিত চলা সমুদ্র স্নানের মধ্যে অবশ্য আপত্তিকর কিছু খুঁজে পাননি। আজ্ঞে, মহামান্য বিচারপতিদের মতে করোনা কেবল গঙ্গাসাগরের পুণ্যস্নান থেকেই ছড়াতে পারে, দীঘা বা মন্দারমণির জলকেলি থেকে নয়। জীবাণু সংক্রমণ কেবল কালীপূজা বা ছটের বাজী থেকেই ছড়াতে পারে, ক্রিসমাসের বাজী থেকে নয়।

এরপরেও আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে বিচারপতিরা নিরপেক্ষ, একদেশদর্শী নন আর সেটা বিশ্বাস না করলেই আপনাকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে। অথচ কলোনিয়াল মানসিকতার বিচারপতিরা, তাদের পদাধিকারবলে, শুধুমাত্র হিন্দুদের পূজাপার্বণকে, সেটা কালীপূজা হোক বা জাল্লিকাট্টু, নিয়ন্ত্রণ করার, খর্ব করার চেষ্টা করবেন আর রাজনৈতিক দলগুলিও মুখ বুজে সেগুলি মেনে নেবে কারণ সমাজ অচেতন। হিন্দু ধর্ম নিয়ে শুধু তির্যক মন্তব্য করার জন্যে স্বামী বিবেকানন্দ দু'জন পাদ্রীকে জাহাজ থেকে জলে ফেলে দিতে গিয়েছিলেন, পরে তারা ক্ষমা চেয়ে মুক্তি পান অথচ আমরা, দু'দিন আগেই ঢাকঢোল পিটিয়ে স্বামীজির জন্মদিন পালন করলেও তাঁর প্রদেয় শিক্ষা নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আর তাই এই পরিণতি।

No comments:

Post a Comment