Tuesday, February 9, 2021

তপন'দার শিক্ষা

১৯৯৪ সালে, কাশিমবাজারে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রথম বর্ষ বর্গ বা 1st Year OTC করার পর, ১৯৯৭ সালে তাঁতিবেড়িয়াতে দ্বিতীয় বর্ষের বর্গ করতে গেছি। সৌভাগ্যক্রমে, প্রথম বর্ষের মত, দ্বিতীয় বর্ষেও বৌদ্ধিক বিভাগের প্রধান হিসাবে পেয়েছিলাম তপন'দাকে। যদিও ঐ সময় দাদার বাবা মারা যান এবং বাবার পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্যে বর্গ ছেড়ে কয়েকদিন আগেই চলে যায়। ফলে বর্গের শেষ কয়েকটা দিন তপন'দাকে পাইনি।

যাইহোক, বর্গে যে ১৬-১৭ দিন তপন'দা ছিল, দু'বেলার খাওয়াদাওয়া একসাথেই হতো। লম্বা বারান্দায়, দুই সারিতে বসে, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা একইসাথে খাবার খেতেন। আমরা সচরাচর দ্বিতীয় পঙতি বা ব্যাচে বসতাম আর খাওয়াদাওয়ার সাথে চুটিয়ে হতো বিভিন্ন গল্প। বর্গের খাবারদাবার কেমন হয় সেটা যে বর্গে না গেছে তার পক্ষে বোঝা কঠিন। ভাত আর ডাল কমন ছিল, সাথে কোনদিন ঘ্যাট, কোনদিন আলুপটলের তরকারি, কোনদিন আলুর দম, কোনদিন আলু আর ফুলকপি - মানে আলুটা কমন। রোজ রোজ আলু খেতে খেতে আমরা যখন বিরক্ত আর তপন'দাকে সেই কথা বললাম, সে আমাদের অভিযোগ তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে বললো যে "তোদের কপাল ভাল তাই আলু পাচ্ছিস, আমাদের সময় অধিকাংশ দিনই হতো কুমড়োর তরকারি"। রোজ কুমড়ো থেকে আলু শতগুণে ভাল, তাই আমরা ঐ নিয়ে আর কোন অভিযোগ জানাতে সাহস পাইনি।

২১ দিনের বর্গে, তিন-চারদিন আমাদের পাতে মিষ্টি পড়েছিল। সাধারণত কোন স্বচ্ছল অতিথি বর্গ দেখতে আসলে, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্যে মিষ্টি নিয়ে যেতেন। এরকমই একদিন রাতে খেতে বসেছি, সেদিন মিষ্টি ছিল। শেষ পাতে রসগোল্লা পরিবেশন হওয়া মাত্রই আমি বুভুক্ষুর মত সেটা একবারে মুখে পুরে দিয়েছি। যদিও বাড়িতেও সেটাই করি। আমার খাওয়া দেখে তপন'দা জানতে চাইলো যে একবারে মিষ্টি মুখে পোরার কারণ কি। আমি খুব গুরুগম্ভীরভাবে বুঝালাম যে একবারে মুখে পুরলে সবক'টা স্বাদকোরক মিষ্টিটার স্বাদ একবারে নিতে পারবে। ফলে প্রকৃত স্বাদটা উপভোগ করতে পারবো। তপন'দা কোন উত্তর না দিয়ে, নিজের ভাগের রসগোল্লাটা অল্প অল্প করে খুঁটে খুঁটে খেতে লাগলো এবং প্রায় পাঁচ-সাত মিনিট ধরে একটা রসগোল্লা খেল। এবার আমার জানতে চাওয়ার পালা ছিল। আমি বললাম যে তুমিও তো মিষ্টি খেতে ভালবাসো, তাহলে একটা রসগোল্লা খেতে এতক্ষণ সময় লাগালে কেন? উত্তরে তপন'দা বললেন, জিনিস যতই প্রিয় হোকনা কেন, পরিমাণ যেখানে সীমিত, সেখানে প্রাপ্ত জিনিসটা বেশীক্ষণ ধরে খেলে, পুনরায় সেটা খাবার আসক্তিটা চলে যায়। একবারে মুখে পুরে খেয়ে নিলে, পরক্ষণেই আরেকটা খেতে ইচ্ছা হবে।

হ্যাঁ, এই ছিল তপন'দা। ছোট ছোট ঘটনা বা গল্পের মাধ্যমে যে কতকিছু শিখিয়ে গেছে, সেগুলির মূল্য এখন বুঝতে পারছি।

No comments:

Post a Comment