Thursday, February 4, 2021

ট্যুইট যুদ্ধ

আপনার যদি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে, গাজাতে প্যালেস্টাইনের হামলা নিয়ে, শার্লি এবদোর কার্টুন নিয়ে বক্তব্য রাখার অধিকার থাকে তাহলে রিহানারও কৃষক আন্দোলন নিয়ে কথা বলার অধিকার আছে। রিহানা কোনও বিদেশী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক নেতা নন যে প্রোটোকল মানার বাধ্যবাধকতা থাকবে। তিনি একজন সেলেব্রিটি আর তাই পেশাগত নিয়ম মেনেই, জনপ্রিয়তা লাভের জন্যে তাঁর কৃষক আন্দোলন নিয়ে ট্যুইট। সহজ ব্যাপারটা বোঝা দরকার যে না তাঁর কৃষক আন্দোলন নিয়ে রাতের ঘুম নষ্ট হচ্ছে আর না তাঁর ট্যুইটে ভারতের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সেলেব্রিটিরা হেডলাইনে থাকতে চান, আর সেটার জন্যেই এই ট্যুইট।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে রিহানার ট্যুইটের প্রেক্ষিতে ভারতের যেসব সেলেব্রিটিরা এখন ট্যুইট করে দেশের একতা ও অখন্ডতা নিয়ে তাঁদের বক্তব্য প্রকাশ করছেন, তাঁরা এতদিন ধরে কোথায় ছিলেন? পালঘরে সাধুদের নির্মম হত্যা বা CAA নিয়ে দেশজুড়ে আগুন জ্বলার সময় তাঁরা কোথায় ছিলেন? চীনের সামরিক আগ্রাসন এবং সেটার প্রেক্ষিতে ভারতের বীর সৈনিকদের বলিদান নিয়ে তাঁরা নীরব কেন? তাঁরা কি এতদিন রিহানার ট্যুইটের অপেক্ষায় পাঁজি দেখছিলেন? সেদিন যদি তাঁরা এইভাবে, দলবদ্ধ হয়ে, ট্যুইট করতেন, তাহলে, কে জানে, আজ হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।

আজ তাদের দলবদ্ধভাবে এই ট্যুইট যুদ্ধ প্রমাণ করছে যে তাদের বক্তব্য মোটেই স্বতঃস্ফূর্ত নয়, বরং স্পনসর্ড। রিহানার মত তারাও ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছেন আর তাদের সেই খ্যাতির লোভকে কাজে লাগাচ্ছে একটা চক্র। মহামারীর মধ্যে আনা এই কৃষি-বিল কৃষকদের জন্যে ভাল না মন্দ সেটা তর্কসাপেক্ষ কিন্তু কেউ আমার মনের মত কথা না বললেই তাকে দেশদ্রোহী বলে দেগে দেয়ার এই প্রবণতা মোটেই সুস্থ মানসিকতার পরিচায়ক নয়। দিনের শেষে ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের অমর কথাটা মাথায় রাখবেন, "I may not approve what you say, but I will defend to the death your right to say it" অর্থাৎ "আমি আপনার বক্তব্যের সাথে সহমত না হতে পারি কিন্তু আপনার বক্তব্য প্রকাশের স্বাধীনতা কে আমি প্রাণপণে রক্ষা করবো।

No comments:

Post a Comment