Thursday, June 6, 2024

বঙ্গ বিজেপির বিধি বাম

বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, বুঝে নিক দুর্বৃত্ত! 


হ্যাঁ, বাংলার মানুষ সেটা বুঝে নিয়েছে বলেই ২৩টা আসনে লড়াই করে ২১টা আসনেই জামানত জব্দ হয়েছে সিপিএমের। যারা এককালে মনে করতো যে সিপিএম সাম্রাজ্যের সূর্য কখনও অস্ত যেতে পারেনা আজ তাদেরই এই ভোট-ভিখিরির দশা।


এই কারণেই সিপিএমের নেতা-কর্মীরা মমতা ব্যানার্জীর উপর চরম ক্ষুব্ধ। নন্দনে স্কচে চুমুক দিয়ে 'সংস্কৃতি চর্চা' করা আঁতেলরা কখনও ভাবতে পারেনি যে আটপৌরে শাড়ি ও হাওয়াই চটি পরা কেউ তাদের শুধু ক্ষমতা থেকে ছুঁড়েই ফেলবেনা, বঙ্গ রাজনীতিতেও অপাংতেয় করে দেবে। এই কারণেই মমতার প্রতি তাদের রাগ, ঘৃণা ও বিদ্বেষ শুধু রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগতও বটে।


তবে গত এক যুগে তারা এটাও বুঝেছে দমনের রাজনীতিতে মমতা ব্যানার্জী তাদের গুরু আর তাকে সরানোর ক্ষমতা তাদের নেই। তাই অধিকাংশ বামই তলায় পুটকি লাগিয়ে রাম হয়েছে যাতে বিজেপি'কে দিয়ে মমতাকে সরানো যায়। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক কিন্তু বাস্তব যে বর্তমানে রাজ্য বিজেপির তথাকথিত ইন্টেলেকচুয়াল গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ সেই বাম থেকে রাম হওয়াদেরই হাতে। এরা মমতা ব্যানার্জী'র বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও মজার কথা হচ্ছে এদের অধিকাংশেরই বুদো ভটচাযের নাম শুনলে এখনও চোখের কোনটা চিকচিক করে আর বুকের বাম দিকটা চিনচিন করে।


মমতা ব্যানার্জী 'লক্ষ্মীর ভান্ডার'-এর মতন কোন জনপ্রিয় প্রকল্পে ভর দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে গেলে এরা জনগণের চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দেয় কারণ জনগণ তাদের প্রাক্তন গুরুঠাকুরদের জামানত জব্দ করে দিয়েছে কিন্তু 'শাদী শগুন' বা 'লাডলি বহেনা' নিয়ে টুঁশব্দ করেনা পাছে এখনকার বাঁধা বাবুদের গোঁসা হয়। এদের মমতা বিদ্বেষ রাজ্য বিজেপি'কেও বিপথে চালিত করছে আর তাদের প্রভাবে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নেয়ার জন্যে জনগণকে 'ভিক্ষাজীবী' জাতীয় কথা বলে নিজেদের জনগণ থেকে আরও দূরে সরিয়ে নিচ্ছে বঙ্গ বিজেপি।

Thursday, April 25, 2024

চাকরি বাতিল ও ন্যায় বিচার

ইংল্যান্ড ও আমেরিকার আইনের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ভারতীয় বিচারব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি হল ইংল্যান্ডের বিখ্যাত আইনজ্ঞ স্যার উইলিয়াম ব্ল্যাকস্টোনের বিখ্যাত উক্তি-  "It is better that ten guilty persons escape than that one innocent suffer মানে একজন নিরপরাধ'কে শাস্তি দেয়ার থেকে দশজন অপরাধীর মুক্তি বেশী ভাল। অর্থাৎ, আইনের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো নিরপরাধ'কে সুরক্ষা দেয়া।


আমি দুঃখিত কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট সেই মাপদন্ডকে উপেক্ষা করেছেন। অযোগ্য প্রার্থীদের সাথে যোগ্য প্রার্থীদেরও চাকরি খারিজ করার এবং প্রদেয় বেতন সুদ সহ ফেরত দেয়ার যে নির্দেশ আদালত দিয়েছেন সেটাকে আর যাই হোক, ন্যায় বলা যায়না।


প্রয়োজনীয় তথ্যের অপর্যাপ্ততা হোক বা অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির অসহযোগিতা - আদালত যদি যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের পৃথক করতে অপারগ হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব ছিল অসহযোগী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকে এদের প্রদেয় বেতন পুনরুদ্ধার করা। আইনের মূল ভিত্তিই হলো Justice should not only be done but also appears to be done মানে ন্যায় শুধু হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, সেটার অনুভূতিটাও থাকা দরকার। কিন্তু তথ্যের অভাবে পুরো প্যানেলই বাতিল করার এই সিদ্ধান্ত সেই মাথা ব্যাথা কমাতে মাথা কেটে ফেলারই নামান্তর।


বিচারপতিরা তাদের কলমের এক খোঁচায় প্রায় পঁচিশ হাজার লোকের চাকরি নিষিদ্ধ করে দিলেন যার মধ্যে বহু যোগ্য প্রার্থীও আছেন কিন্তু মজার কথা হলো যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এতবড় দুর্নীতি হলো তাদের বিরুদ্ধে সেই বিচারপতিরা কোন শাস্তি ঘোষণা করলেননা কারণ সেটা আইনের অন্য ধারায়, অন্য আদালতে বিচার্য। সেই পৃথক বিচারপ্রক্রিয়াতে কি ধরণের দীর্ঘসূত্রিতা ও প্রহসন চলছে সেটা সাধারণ মানুষ দেখলেও আইনের দেবী চোখে কাপড় বেঁধে রেখেছেন। প্যানেলের যথার্থতা নির্ধারণ করা নিয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট সময়সীমা বেঁধে দিলেও বেআইনি প্যানেল তৈরীতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কোন সময়সীমা নেই। প্রশাসন ও শাসকদলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের ইচ্ছা ও সহযোগিতা ছাড়া যে এতবড় দুর্নীতি সম্ভব নয় এটা জেনেও অন্যান্য রাজনৈতিক সমীকরণের কারণে সেই তদন্ত বিশ বাঁও জলে। 


এরপরেও যদি আপনি আমাকে বিচার বিভাগের ভূমিকায় উচ্ছ্বসিত হতে বলেন তাহলে আমি নাচার। বিচার বিভাগের দায়িত্ব ন্যায় বিচার করা। ভোটের ইস্যু বানিয়েই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না।

Friday, April 5, 2024

চিনি গো চীনি তোমারে

ছোটবেলায়, সম্ভবত চাঁদমামা'তে, একটা গল্প পড়েছিলাম। পাটালিপুত্রে তখন প্রবল ক্ষমতাশালী সম্রাট ধননন্দের শাসন। তার প্রতাপ এতটাই ছিল যে তার সৈন্যদলের সাথে লড়াই করতে হবে শুনে বিশ্বজয় করতে বেরোনো আলেকজান্ডারের সৈন্যদলেও ভীতির সঞ্চার হয় এবং বিদ্রোহ দেখা দেয়। চন্দ্রগুপ্ত তাকে হারিয়ে ক্ষমতা দখলের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কিন্তু ধননন্দের সাথে এঁটে উঠতে পারছেননা। বারবার লড়াই করে বিপর্যস্ত চন্দ্রগুপ্ত তখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।


কপর্দকহীন এরূপ অবস্থায় তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে একদিন খাবার ও বিশ্রামের জন্যে একটি সাধারণ নাগরিকের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই গৃহস্থের বাড়িতে কেবল একজন মা তার দুই ছেলে'কে নিয়ে থাকতেন। রাত্রিবেলায় সেই মা তাঁর দুই ছেলের সাথে চন্দ্রগুপ্তকেও পঙতি ভোজনে বসিয়ে খিচুড়ি পরিবেশন করেছেন। খিচুড়িতে হাত দিয়েই চন্দ্রগুপ্ত হাত সরিয়ে নেন কারণ সেটা অত্যন্ত গরম ছিল। তার এই আচরণ দেখে পরিবেশনকারী মা বলেন, "বাছা, তোমার তো দেখছি চন্দ্রগুপ্তের মত অবস্থা।" 


খাওয়া মাথায় উঠলো চন্দ্রগুপ্তের। সে সচকিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, "মা, আপনি এই কথা বললেন কেন?" উত্তরে সেই মহিলা বলেন, "খিচুড়ি গরম হলে সরাসরি মাঝখানে হাত দিতে নেই, বিভিন্ন পাশ থেকে ঠান্ডা হওয়া খিচুড়ি আস্তে আস্তে খেয়ে মাঝের দিকে এগোতে হয়। চন্দ্রগুপ্তও সেই গরম খিচুড়ির মত ধননন্দের সাম্রাজ্যকে সরাসরি আক্রমণ করে ভুল করছেন।"


গল্পটির ঐতিহাসিক সত্যতা কতখানি তা জানিনা তবে তারপরই নাকি চন্দ্রগুপ্ত আবার নতুন উদ্যমে সেনা যোগাড় করেন এবং ধননন্দের সাম্রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চলগুলি দখল করতে করতে পাটালিপুত্রে পৌছে ধননন্দকে পরাজিত করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে শিবাজি মহারাজও একই পদ্ধতিতে মোঘল সাম্রাজ্যের খন্ড খন্ড অংশ জয় করে হিন্দুপদপাদশাহী প্রতিষ্ঠা করেন।


চীন অরুণাচলের কয়েকটি যায়গার নাম বদলে দেয়া নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ায় যাদের রক্ত গরম হচ্ছেনা তাদের মনে রাখা উচিত যে মোদীও চীনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের আগে তাকে বিভিন্ন যায়গায় দুর্বল করতে চাইবে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের জন্যে জার্মানি, ব্রাজিল'কে নিয়ে লবি করা হোক বা চীনের মদতপুষ্ট সোমালিয়ার জলদস্যুদের থেকে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের মুক্ত করানো, শ্রীলঙ্কার বন্দরে চীনের জাহাজের অবস্থানে বারণ করাই হোক বা অস্ট্রেলিয়া আর জাপানকে কূটনৈতিক সঙ্গী করে দক্ষিণ চীন সাগরে ভারসাম্য বজায় রাখা- কাজ কিন্তু চলছেই। আর এরমধ্যে চীন সীমান্ত পার করার চেষ্টা করলে খালিহাতেই তাদের বেধড়ক মার দিচ্ছে ভারতীয় সেনা। গল্পের সেই চন্দ্রগুপ্তের ভুল মোদী করবেন না।

Wednesday, April 3, 2024

গণতন্ত্র ও কালোপযোগী সিদ্ধান্ত

কোন জাতির উত্থান বা পতনের ক্ষেত্রে বংশগরিমা একটা বড় ভূমিকা পালন করে। আধুনিক বিশ্বের প্রাচীণতম গনতন্ত্র, আমেরিকা তার বংশপরিচয় দক্ষিণ ডাকোটা রাজ্যের রাশমোর পাহাড়ে খোদাই করে রেখেছে আর সেখানে উজ্জ্বল হয়ে আছে তাদের চার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন, টমাস জেফারসন, আব্রাহাম লিংকন ও থিওডর রুজভেল্টের মুখ। অ্যান্টনি হোপসের কাহিনী অবলম্বনে ঝিন্দের বন্দী রচনার সময় শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন লিখেছিলেন যে "নাম দ্বারাই বংশপরিচয় স্বীকার করিলাম" তেমনি এই চার রাষ্ট্রপতির দ্বারাই আমেরিকা স্বীকার করেছে তার পরিচয়। 


ভারতের মত সুবিশাল ও ঐতিহ্যবাহী দেশের ক্ষেত্রে মাত্র চারটি নাম বাছা মুশকিল আর তাই আমি, ব্যক্তিগতভাবে, অন্তত দশ'টি নাম নেবো যারা আমাদের দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পরিচায়ক। শ্রী রাম, শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধদেব, চৈতন্যদেব, গুরু গোবিন্দ সিং, শিবাজি, নেতাজী, বাবাসাহেব আম্বেদকর এবং সর্দার প্যাটেল। 


শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণ নিঃসন্দেহে আমাদের সাংস্কৃতিক পরম্পরার প্রতীক। হিন্দুদের নবম অবতার বলে স্বীকৃত বুদ্ধদেব এতটাই প্রভাবশালী যে তার মহিমা ব্যাখ্যা করা এই অধমের সাধ্যের বাইরে। পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাঁর মতবাদের ব্যপ্তিই তার পরিচায়ক। এরপর আসে ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা চৈতন্যদেব- যার মহিমায় সনাতন ধর্ম পরিচিত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। গুরু গোবিন্দ সিং ও শিবাজি স্বাভাবিকভাবেই আসবেন তাদের স্বাধীনচেতা মনোভাব ও জাত্যাভিমানের কারণে। আর আধুনিক যুগে নেতাজী থাকবেন একটি পরাধীন জাতিকে শুধুমাত্র স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখানো নয়, সেটাকে প্রাপ্তির উপায় দেখিয়ে দেয়ার জন্যে। বাবাসাহেব থাকবেন তার দূরদর্শিতা ও স্বজাতিপ্রীতির কারণে যা শত প্রলোভন সত্ত্বেও তাঁকে ও তাঁর অনুগামীদের কোন বিদেশী মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট করেনি এবং সবশেষে থাকবে সর্দার প্যাটেলের নাম যিনি বিভিন্ন রাজন্যবর্গকে ভারতের অঙ্গীভূত হওয়ার দিশা দেখিয়েছিলেন।


দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এতদিন স্বদেশী ঠাকুর ছেড়ে বিদেশী কুকুরের গুণগান করে গিয়েছি। ১০০০ বছরের পরাধীনতাকে মাত্র ২০০ বছরের পরাধীনতা ভেবে নিয়েছি যেখানে বাস্তব হলো যে ইসলামিক শাসনেও ভারতবর্ষ ততটাই পরাধীন ছিল যতটা ইংরেজ শাসনে। কতিপয় ধান্ধাবাজ লোক ইসলামের বদলে ইংরেজকে বাছার জন্যে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়'কে খলনায়ক হিসাবে দেখাতেই পারেন কিন্তু বাস্তবে সিরাজোদৌল্লার মত লম্পট ও স্বেচ্ছাচারী শাসকের থেকে মুক্তির জন্যে শুধু রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নয়, তার সাথে রাণী ভবানী, জগৎশেঠ, রায়বল্লভ প্রমুখরাও সাথ দিয়েছিলেন কারণ সেই সময় বাঙালী সমাজ আজকের মত মানসিক স্থবিরতায় ভুগতোনা। 


শত অভিযোগ সত্ত্বেও বাম শাসনকে ছুঁড়ে ফেলার জন্যে বর্তমান বাঙালী সমাজের তিন দশকের বেশী সময় লেগেছিল এবং একইভাবে বর্তমান শাসককে ছুঁড়ে ফেলতেও বাঙালী সমাজের দ্বিধা স্পষ্ট। সৌভাগ্যক্রমে, সেই যুগের শাসকবর্গের মধ্যে এই দ্বিধা ছিলনা আর তাই তাঁরা যথাসময়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

Saturday, March 30, 2024

বিজেপির রণনীতি

কিছুদিন আগেও এই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে তারা সাধারণ মানুষের বাড়ি গিয়ে প্রচার করতে পর্যন্ত দ্বিধা করছিল পাছে সেখান থেকে 'চোর' আর 'তোষণকারী' বলে ভাগিয়ে দেয়। বিজেপি'র জন্যে খোলা মাঠ পড়ে ছিল কিন্তু রাখে মোদী মারে কে? জনগণ যাতে বিকল্প হিসাবে বেছে না নেয় তাই ফর্মুলা২১ মানে ২০২১ সালের নীতি মেনে এবারেও অর্জুন সিং বা তাপস রায়ের মত দলবদলুদের মাথায় তুলে নেয়া হলো। পবন সিং-এর মত বাঙালী বিদ্বেষী মুখকে প্রার্থী করা হলো। প্যারাসুট দিয়ে অনির্বাণ গাঙ্গুলীর পরজীবি নেতাদের আসরে নামানো হলো। দুধ কুমার মন্ডলের মত জননেতাকে বঞ্চিত করে হালে যোগ দেয়া জনৈক অবসরপ্রাপ্ত IPS অফিসারকে বীরভূমের প্রার্থী করে দেয়া হলো।


এরসাথে যোগ করুন চার বছরের বেশী সময় ধরে অপেক্ষার পর নির্বাচনের ঠিক আগে CAA প্রণয়ন করা এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল কংগ্রেসকে তার বিরোধিতা করার সুযোগ করে দেয়া। সেদিন এক TV শো'তে দেখলাম তৃণমূলের জনৈক মুখপাত্র, কৃশানু মিত্র, CAA সংক্রান্ত আলোচনায় বর্ধমানের জৌগ্রামের (যদিও এলাকার নামটা মুখপাত্রের মনে ছিলনা) পলাশ অধিকারীর পরিবারের বেঙ্গালুরুতে আটক হওয়া নিয়ে সোচ্চার হলেন এবং তদানীন্তন বিজেপি সরকারকে বাঙালী বিদ্বেষী বলে প্রচার করলেন। মজার কথা হলো যে তার প্রতিপক্ষ হিসাবে আলোচনায় থাকা বিজেপি'র প্রতিনিধি, শঙ্কুদেব পান্ডা, এর উত্তরে কোন যুৎসই উত্তর দিতে না পেরে চিৎকার করে 'তৃণমূল রোহিঙ্গাদের এই রাজ্যে বসাতে চায়' বুলি আউড়ে গেলেন। শঙ্কুদেব হয়তো জানেইনা যে পলাশ অধিকারীর কেসটা কি আর সেটাতে এই রাজ্যের প্রশাসন কি ভূমিকা নিয়েছিল। আসলে দলে শক্ত খুঁটি ধরা থাকলে তথ্যের জ্ঞান আজকাল আর খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচিত হয়না নাহলে শঙ্কুদেব বলতে পারতো যে কর্ণাটক পুলিশ যখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে পলাশদের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল তখন কিভাবে প্রশাসন বর্ধমানের গ্রামে, তার বিদ্যালয়ে এমনকি হাবড়া'তে তার জন্মস্থানের তথ্যও সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিল। পলাশের প্রথম উকিল যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিল তখন আত্মদীপ কিভাবে সেই কেসের নতুন ওকালতনামা নেয় এবং দিব্যা নামের এক উকিল নতুন করে কেস সাজিয়ে তাদের মুক্তি পেতে সাহায্য করে।


এইসব ঘটনাপ্রবাহ দেখে আমি সন্দিহান যে মোদী এখনই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে চুড়ান্ত ধাক্কা দিতে কতটা আগ্রহী। প্রথম তালিকা প্রকাশের পরে শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে কৃষ্ণনগর গিয়ে 'রাজমাতা' বা 'রানীমা'কে এলাকার প্রার্থী হতে রাজী করালেন সেটা দেখে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে ২০২৪ এ যে গোটা দেশের সাথে এই রাজ্যেও লোকসভা নির্বাচন হবে সেটা বিজেপির কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্বের হয়তো জানা ছিলনা। এই কারণে হোমওয়ার্ক করে রাখতে পারেনি। এখনও রাজ্যের দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা বাকি। সমর্থকেরা হয়তো অন্য রাজ্যের উদাহরণ টেনে বলবেন যে সেগুলিতেও বাকি আছে কিন্তু দলের মতে যে রাজ্যে সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে এবং যারা সেই ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত তারা যেখানে সমস্ত আসনে ইতিমধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে সেখানে প্রার্থী নির্বাচনে এই গড়িমসি সমর্থক ও ভোটার - কাউকেই পজিটিভ বার্তা দেয়না।

Friday, March 29, 2024

দশ বছরের পার্থক্য

"এবার কেন্দ্র ভারতবর্ষ"- এক শতাব্দীরও বেশী সময় আগে এই স্বপ্ন দেখেছিলেন এক নরেন্দ্র আর এই বিরাট কালখণ্ড পার করে এসে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করছেন আরেক নরেন্দ্র। ভাবুন, আজ থেকে দশ বছর আগে ভারতীয়দের মধ্যে আত্মপরিচয় নিয়ে গর্ববোধ কতটা ছিল, হিন্দু হিসাবে জাত্যাভিমান কতটা ছিল, ধর্মপালনের প্রবৃত্তি কতটা ছিল আর আজ কতটা আছে। আগে সিনেমাতে নায়ক ৭৮৬ এর বিজ্ঞাপন করতো, মৌলবীর দেয়া তাবিজ গুলি থেকে তার প্রাণ বাঁচাতো আর এখন যুবসমাজ স্বেচ্ছায় হাতের ট্যাটুতে ত্রিশূল বা ওম চিহ্ন বানায়। বাইকে বজরঙবলীর পতাকা লাগিয়ে ঘোরে। এটাই পার্থক্য।


ISRO নতুন গজিয়ে ওঠা কোন সংস্থা নয়, সে আগেও বিভিন্ন মিশন পরিচালনা করেছে কিন্তু ভাবুন তো দশ বছর আগে দেশের ক'টা লোক ISRO এর কার্যকলাপ নিয়ে গর্ব করা তো দূরের কথা, তার খোঁজখবর অবধি রাখতো? চন্দ্রযান বা মঙ্গলযান নিয়ে দেশজুড়ে উন্মাদনা দশ বছর আগে কেউ কল্পনায় আনতে পারতো? HAL, DRDO, মাজেগাঁও ডক ইয়ার্ড বা BEL এর নাম অবধি জানতো? অগ্নি, তেজস, ব্রহ্মস ইত্যাদির সাফল্য নিয়ে পারিবারিক আলোচনা এক দশক আগেও ভাবা গিয়েছিল? গোটা দেশের মধ্যে আজ যে আত্মীকরণ দেখা যাচ্ছে এটাই দশ বছরের প্রাপ্তি।


এলাকার নেতাদের ঘুষ না দিয়েও সরকারি প্রকল্পের টাকা সরাসরি নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে কতজনের ধারণা ছিল বা ঘরে বসেই লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেয়া যাবে কতজন ভাবতে পেরেছিলেন? রক্তাক্ত কাশ্মীরে যে ট্রেন ছুটবে আর ভ্রমণপিয়াসী বাঙালী সপরিবারে সেই ট্রেনে ঘোরার ছবি ফেসবুকে দেবে এটা দশ বছর আগে কারুর আন্দাজ ছিল? ইউক্রেন থেকে ইন্দোনেশিয়া যে কূটনৈতিকভাবে ভারতের সাহায্যপ্রার্থী হবে কেউ ভাবতে পেরেছিলেন? এটাই বা কার কল্পনা ছিল যে একের পর এক আরব দেশগুলিতে যে হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে সনাতন ধর্মের বিস্তার ঘটবে? ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা চলাকালীন ইতালিয় নাবিকদের নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়া দেখে অভ্যস্ত ভারতীয়রা কখনও ভাবতে পেরেছিল যে কাতারের সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরেও আটজন ভারতীয় নিরাপদে দেশে ফিরে আসবে?


এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে দেশে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে একটা শক্তিশালী সরকার আছে বলে। এমন একজন ব্যক্তি যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটা টিম যেখানে জয়শঙ্কর, অশ্বিনী বৈষ্ণব, নীতিন গডকরি, রাজীব চন্দ্রশেখর প্রমূখ লোকেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করছেন। চাল চুরি, ত্রিপল চুরি, রেশন চুরি'র মত ছেঁদো বিষয়ে এরা ভাবিত নন কারণ তাদেরও স্বপ্ন হলো "ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে" আর সেই লক্ষ্য পূরণের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক ও অদ্বিতীয় - নরেন্দ্র মোদী।

Wednesday, March 20, 2024

গণতন্ত্র ও নির্বাচন

যেকোন 'তন্ত্র' সফল হওয়ার জন্যে যার নামে তন্ত্র, তার শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। যেমন, রাজতন্ত্রে যদি রাজা দুর্বল হয়ে যায় তাহলে দেশে মাৎস্যন্যায় দেখা দেয়। একনায়কতন্ত্রে যদি সেই একনায়ক দুর্বল হয়ে যায় তাহলে তার দশা কি হয় তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ চেসেস্কু। দলতন্ত্রে যদি দল দুর্বল হয়ে যায় তাহলে তার পরিণতি কি হয় তার প্রমাণ পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম।


একইভাবে, গণতন্ত্র সফল হওয়ার জন্যে জনগণের শক্তিশালী হওয়া আবশ্যক। সেটা না হলে শাসক রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করবেই। শুধু পাঁচ বছর অন্তর ভোট দেয়াই গণতন্ত্র নয়, প্রকৃত গণতন্ত্র হল শাসকের উপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। আধুনিক যুগের ইতিহাসে পৃথিবীর প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশ আমেরিকাতে জনগণ এই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে বলেই প্রবল প্রতাপান্বিত আমেরিকার রাষ্ট্রপতি, নিক্সনকে নিছক ফোনের বার্তালাপ বিনা অনুমতিতে রেকর্ড করার জন্যে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে ইস্তফা দিতে হয়। 


আমেরিকার দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের সাপেক্ষে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস নেহাতই শিশু তাই আমরা প্রায়শই ভুলে যাই যে কেন্দ্র বা রাজ্যের শাসকদলের প্রশংসা করা জনগণের দায়িত্ব নয়, সে কাজের জন্যে তাদের যথেষ্ট সক্ষম ও শক্তিশালী মিডিয়া টিম আছে। জনগণের দায়িত্ব তাদের ত্রুটি, বিশেষত সেগুলো যেগুলোকে তারা অর্থ ও জনবল দ্বারা ঢাকতে চায়, প্রকাশ করা। তাদের যে কাজের ফলে তাদের রাজনৈতিক লাভ হলেও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেগুলিকে তুলে ধরা। কিন্তু তারপরেও পাঁচ বছর পর আসে সেই একটা দিন যেদিন জনগনকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে তারা কার হাতে পরবর্তী পাঁচ বছরের দায়িত্ব তুলে দেবে। আগামী ১৯শে এপ্রিল থেকে ১লা জুন অবধি দেশের বিভিন্ন অংশে খন্ডে খন্ডে আসবে সেই দিন যখন জনগণকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে দেশের দায়িত্ব কার হাতে দেবে।


প্রশ্ন যখন সার্বিকভাবে দেশের তখন আমি কখনোই কোন আঞ্চলিক দলকে সেই দায়িত্বভার দেবনা। কারণ যেকোন আঞ্চলিক দল খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের ক্ষুদ্র অঞ্চল নিয়ে এতটা সংবেদনশীল থাকে যে দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে তারা উপেক্ষা করে। তাছাড়া একাধিক রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে যদি কেন্দ্রে কোন সরকার গঠন করে তাহলে তাদের স্থায়িত্ব যে কতটা ক্ষণস্থায়ী হয় তার দৃষ্টান্ত দেবেগৌড়া বা গুজরাল সরকারের পরিণতি হিসাবে আমাদের সামনেই আছে।


জাতীয় দল হিসাবে কংগ্রেসকেও আমি বেছে নেবনা তার কারণ জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে তাদের আপোষের ইতিহাস। নেহেরুর সময় চীন আগ্রাসন হোক বা নৌসেনা ও উপকূল রক্ষী বাহিনীকে সরিয়ে নিয়ে দাউদ ইব্রাহিমকে বম্বেতে বিস্ফোরক প্রবেশে সাহায্য - সবই হয়েছে কংগ্রেস আমলে। তাদের না বাছার আরেকটা কারণ হলো তাদের জিনে থাকা হিন্দুবিদ্বেষ। গভীর রাতে শঙ্করাচার্যকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হোক বা ওয়াকফ আইন, ধর্মস্থান সংক্রান্ত আইন - সব ক্ষেত্রেই তাদের নেতৃত্বের হিন্দু বিদ্বেষ ফুটে উঠেছে।


নোটা কখনোই আমার পছন্দ হবেনা কারণ বর্তমান প্রেক্ষিতে সেটা ভোট নষ্ট করা ছাড়া আর কিছু নয়। নোটা'তে এক লক্ষ ভোট পড়লেও সেটা হাজার ভোট পাওয়া প্রার্থীকে হারাতে পারবেনা যদি সেটা বাকি প্রার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক হয়। তাছাড়া সামাজিক কাজে আমাদের নিয়মিত যাদের সাথে সাংস্কৃতিক সংঘাত হয় এবং ভবিষ্যতেও হবে তারা কখনোই নোটা'তে ভোট দেবেনা, দেবে কৌমের স্বার্থে।


এমতাবস্থায় আমারও কর্তব্য স্বজাতির স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্যে ভোট দেয়া। আর সেটা করতে গিয়ে আমি কখনোই কোন দলকে "অতটা হিন্দুত্ববাদী নয়" বলে হিন্দুবিদ্বেষী কোন দলকে নিজের মূল্যবান ভোট দেবনা। হ্যাঁ, ভোট দেয়ার আগে অবধি নিজের ভোটের মূল্য উসুল করতে সেই দলকে দেশের ও স্বজাতির স্বার্থ রক্ষার জন্যে বাধ্য করাটাও আমারই দায়িত্ব আর সেই কাজ করার দায়িত্ব আমি অন্য কাউকে ইজারা দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারিনা কারণ দেশও আমার আর সংস্কৃতিটাও আমার। এর রক্ষা আমার দায়িত্ব।

Saturday, February 10, 2024

নরসিংহ রাও ও ভারতরত্ন

পি ভি নরসিংহ রাও'কে ভারতরত্ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক। বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বিরত রাখা (দৈনন্দিন পূজা উপলক্ষে) আর মনমোহন সিংহ'কে মুক্ত অর্থনীতি প্রণয়নের স্বাধীনতা নেয়া দেয়া ছাড়া জাতীয় স্বার্থে তার আর খুব বেশী অবদান নেই। যদিও সেই সময় সঙ্ঘ পরিবার মুক্ত অর্থনীতির তুমুল বিরোধিতা করেছিল। স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ নামে একটা অভিযান শুরু করেছিল। আমার মনে আছে, ১৯৯২ সালে কল্যাণী শিবিরের সান্ধ্যকালীন বৈঠকে RSS-এর তদানীন্তন সহঃ সরকার্যবাহ, মদন দাস দেবী, এই নিয়ে বিশেষ প্রবচনও দিয়েছিলেন।


নরসিংহ রাওয়ের আমলেই পাশ হয় Places of Worship Act (1991) যা অনুসারে ভারতের সব ধর্মস্থানের স্থিতাবস্থা ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট অনুযায়ী বহাল রাখতে হবে। ওয়াকফ অ্যাক্ট (১৯৯৫) যা অনুসারে ওয়াকফ বোর্ড যেকোন সম্পত্তিকে নিজেদের বলে দাবী করতে পারে আর সেটা অপ্রমাণের দায় প্রতিবাদীর। হর্ষদ মেহতার থেকে ১ কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ হোক বা সংসদে আস্থা ভোটে জেতার জন্যে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সদস্যদের টাকা দেয়ার মামলা হোক, নরসিংহ রাওয়ের ইমেজ মোটেই নিষ্কলুষ নয়। তার দুর্বল মেরুদন্ডের আরেকটা বড় দৃষ্টান্ত হলো সব ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার পরেও আমেরিকার চাপে পারমাণবিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে যাওয়া। পরে বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হবার পরে তাকে বলেছিলেন যে "আমি সব ব্যবস্থা করে গেলাম, আপনি প্রয়োগ করবেন"। তবে তার একটা বড় কৃতিত্ব হলো গান্ধী পরিবারের বাইরে, প্রথম কংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে, সাফল্যের সাথে পাঁচ বছর সংখ্যালঘু সরকার চালানো। 


আমি মনে করি যে কোন অন্যায় সিদ্ধান্ত যদি ভাল উদ্দেশ্য সাধন করার জন্যে নেয়া হয় তাহলে সেই সিদ্ধান্ত মোটেই অন্যায় নয় মানে End justifies the means। সত্য, শিব আর সুন্দর পরস্পর সম্পৃক্ত। কোন অসুন্দর পথে শিবে উপনীত হওয়া যায়না আর শিবে উপনীত হওয়ার কোন পথই অসুন্দর হতে পারেনা। এই কারণেই আমি ব্যক্তিগতভাবে নরসিংহ রাওকে ভারতরত্ন সম্মানের যোগ্য মনে না করলেও তাকে এই সম্মান প্রদানের নরেন্দ্র মোদীর এই সিদ্ধান্তের সাথে সহমত। এই সম্মান দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে মোদীর গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে। কংগ্রেসে থেকে, গান্ধী পরিবারের স্তাবক না হয়েও যে আলাদা উচ্চতায় ওঠা যায় সেটা মনে করিয়ে দেবে এবং একইসাথে RSS কেও তাদের চিন্তাভাবনার সীমাবদ্ধতা বুঝিয়ে দেবে।

Tuesday, February 6, 2024

সম্প্রদান

ইদানীং কিছু যাদবপুরী বিজ্ঞ কন্যাদানে আপত্তি জানাচ্ছে। তাদের মতে কন্যা কোন বস্তু নয় যে তাকে দান করা যাবে। এই বিজ্ঞরা হয়তো কালকে 'জীবনদান' বা 'মতদান' নিয়েও একই আপত্তি তুলবে। কিন্তু এই হঠাৎ বিজ্ঞদের জানা নেই যে বিবাহ একটা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া আর কন্যা সম্প্রদান তার একটা অংশ বিশেষ।

"ওঁ এতস্যৈ সবস্ত্রায়ৈ সালঙ্কারায়ৈ কন্যায়ৈ নমঃ"

মন্ত্র বলে যে কন্যাকে সম্প্রদান করা হয় সে কতটা অসাধারণ তার বর্ণনা রয়েছে পরবর্তী আচার গ্রন্থিবন্ধনে।

"সাবিত্রী সত্যভামা হিমগিরিতনয়াহুরুন্ধতী জহ্নূকন্যা লোপামুদ্রা সুভদ্রাহদিতি রতি কমলা রুক্মিনী রেবতী চ। রম্ভা মেনা যশোদা সুরূপতিবনিতা কৈটভি বানপুত্রী, সৌভাগ্যং পুত্রলাভং সকলশুভকরং মঙ্গলং বো দিশ্ম।"

হ্যাঁ, কন্যা, যার উৎপত্তি কম ধাতু অর্থাৎ কামনা থেকে, হলো মা-বাবার শ্রেষ্ঠ কামনার ধন তথা কাম্য অভিজ্ঞান। আর সেই ঐশ্বর্যকে আরও মহিমান্বিত করা হয় সে কোন সংস্কৃতির প্রতিনিধি সেই বিবৃতি দ্বারা। সাবিত্রী, সত্যভামা, পার্বতী, অরুন্ধতী সহ অন্যান্য মহীয়সীদের সার্থক উত্তরসূরী এই কন্যাকে দান করার মত উদারতা দাতার থাকতে হয় আর সেই দান গ্রহণ করে, তাকে রক্ষা করার যোগ্যতা গ্রহীতার থাকতে হয়। তাই বলা হয় - 

"দূর্বাপুষ্পং ফলঞ্চৈব বস্ত্রং তাম্বুলমেবচ

এভি কন্যা ময়া দত্তা রক্ষণং পোষণং কুরু।"

এই মহার্ঘ দান গ্রহণ করার পর গ্রহীতার যাতে কোন হীনমন্যতা না আসে তাই পরবর্তী মন্ত্রই হচ্ছে

"ওঁ যথেন্দ্রানী মহেন্দ্রস্য; স্বাহা চৈব বিভাবসোঃ। রোহিনী চ যথা চন্দ্রে, দময়ন্তী যথা নলে। যথা বৈশ্রবনেভদ্রা, বশিষ্টে চাপ্যরুন্ধতী। সীতা চ রামচন্দ্রে, গৌরীশঙ্কর এব চ, যথা- নারায়নে লক্ষী স্তথাত্বং ভব ভর্ত্তারি।"

একের পর এক পারফেক্ট কাপলের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে যে সম্পর্কটা ঠিক কেমন হবে। দান ও গ্রহীতা যাতে পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠতে পারে সেই লক্ষ্যেই হয় গ্রন্থিবন্ধন।

Tuesday, January 16, 2024

হাইকোর্টে অ-ইংরেজি ভাষার ব্যবহার


বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। হিন্দি বলয়ে যখন আদালতের কাজকর্ম হিন্দি ভাষায় হয়, পশ্চিমবঙ্গে সেটা বাংলায় বা তামিলনাড়ু'তে তামিল ভাষায় হলে সংবিধান অশুদ্ধ হয়ে যাবেনা। আর নেহাতই যদি কোর্ট ল্যাঙ্গুয়েজ সংক্রান্ত ৩৪৮(১)(এ) ধারা বা ২১শে মে, ১৯৬৫ সালের ক্যাবিনেট কমিটির সিদ্ধান্ত যা অনুসারে কোন হাইকোর্টে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির অনুমতি আবশ্যক হওয়া অশুদ্ধ হয়, সেক্ষেত্রে উপযুক্ত সংশোধন অবিলম্বে করা উচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে তামিলনাড়ু, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিসগড় এবং কর্ণাটক সরকার বছরখানেক আগেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাইকোর্টে যথাক্রমে তামিল, গুজরাটি, বাংলা, হিন্দি ও কন্নড় ভাষা ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিল যা কেন্দ্র সরকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয় এবং সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চ সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন যদিও ১৯৫০ সালে সংবিধানের ৩৪৮(২) অনুসারে  রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ (১৯৬৯), মধ্যপ্রদেশ (১৯৭১) বা বিহারের (১৯৭২) ক্ষেত্রে হিন্দি ভাষায় কোর্টের কার্যাবলী পরিচালনের অনুমতি দিতে সুপ্রিম কোর্ট আপত্তি করেনি। ঔপনিবেশিক দাসত্ব থেকে মুক্তির পর্যায় হিসাবে মোদী সরকার IPC, CrPC ও Evidence Act-এর বদলে নতুন আইন প্রনয়ন করছেন। এমতাবস্থায়, হাইকোর্টের কার্যাবলী শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় পরিচালনা সেই ঔপনিবেশিক দাসত্বের পরিচায়ক হয়ে থাকবে ঠিক যেমন আরেকটি দাসত্বের পরিচায়ক হলো ভারতের মত গ্রীষ্মপ্রধান দেশে কালো কোট, গাউন ও গলাবন্ধ পরে উকিলদের সওয়াল করা।

Wednesday, November 29, 2023

লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠের আগে কোরান পড়ুন

'হিন্দুত্ববাদী'দের উদ্যোগে ব্রিগেড ময়দানে 'লক্ষ কন্ঠে গীতাপাঠ'-এর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থাকলেও এই অনুষ্ঠান, আমার কাছে, কোনও হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচি নয়। এর পিছনে যশ, অর্থ, রাজনৈতিক স্বার্থ সহ একাধিক বিষয় থাকতে পারে কিন্তু ধর্ম রক্ষা বা হিন্দু স্বার্থ রক্ষা একেবারেই নেই। আমার এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে হিন্দুত্বের সার্টিফিকেটধারীরা আমাকে 'পতিত হিন্দু' বলে দাগাতে পারেন কিন্তু আমি মনে করি, লক্ষ কেন, কোটি কন্ঠেও গীতার বাছাই করা কয়েকটি অধ্যায় পাঠ করলে হিন্দুদের কোন উপকার হবে। কেন? এবার সেটাই বলছি।

প্রথমত, গীতা, যোগ বা আয়ুর্বেদের মত বিষয়গুলি হিন্দুদের proprietary নয়, বরং এগুলো সমগ্র বিশ্বকে সনাতন সংস্কৃতির উপহার। গীতা পাঠ ও তার উপলব্ধি একজন ইহুদি বা ফরাসি'কে ততটাই অনুপ্রাণিত করবে যতটা একজন হিন্দুকে। শ্রীমৎভগবতগীতা'র শিক্ষা সার্বজনীন। 

দ্বিতীয়ত, আমি মনে করি গীতা'র কয়েকটি বাছাই অধ্যায় পাঠের পরিবর্তে যদি কোরান শরীফের বাছাই কয়েকটি অধ্যায় পাঠ করা হতো তাহলে সেটা অনেক বেশী কার্যকর হতো। কারণ, গীতা পাঠের অনুষ্ঠানে গীতার মাহাত্ম্য ও সনাতন ধর্মের গরিমার কথা শুনে একদল ভাববে যে সনাতন ধর্ম এত মহান, সে নিশ্চয়ই অবিনশ্বর কিন্তু তারা ভুলে যাবে যে সনাতন ধর্ম এত মহান হওয়া সত্ত্বেও তার ধারণকারী ভূমির পরিমান কালেকালে কিভাবে সঙ্কুচিত হয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে এসেছে এবং এখনও সঙ্কুচিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

তৃতীয়ত, গীতার এই বাছাই কয়েকটি অধ্যায় পাঠের পরিণতিতে অন্যদল ভেবে নেবে যে গীতার মত অন্য ধর্মগ্রন্থগুলিতেও নিশ্চয়ই একই কথা বলা হয়েছে। তারা কোনদিন অন্যদের ধর্মগ্রন্থের একটা পাতা না উল্টেও, অন্ধের হস্তীদর্শনের মত, সেগুলি সম্পর্কে মনগড়া ধারণা তৈরী করে নেবে।

হিন্দুদের যদি গীতাপাঠ করতেই হয় তাহলে সেটা তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে করুক, সাংগঠনিকভাবে নয়। কোন ব্যক্তি নিজের চরিত্রের কতটা বিকাশ করতে চায় বা পারে সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। যদি এরকম উদ্যোগ সাংগঠনিকভাবে নেয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আমি কোরান পাঠের আয়োজনকে স্বাগত জানাবো। সেক্ষেত্রে হিন্দুদের 'সব ধর্মে একই কথা বলা আছে' এই ভ্রান্ত ধারণার অবসান হবে এবং তারা আশু বিপদ থেকে সতর্ক থাকতে পারবে। আর সেই কাজ যদি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে হয় তাহলে সেটা বিরাট সাফল্য।

Wednesday, September 27, 2023

হিজাব সংস্কৃতি

শরীর এবং সমাজ - উভয়েরই একটা নিজস্ব গঠনতত্ত্ব থাকে, সেখানে কোন ফরেন এলিমেন্ট খুব সহজে গ্রহণযোগ্য হয়না। এই কারণেই হাজারটা ফ্যাক্টর মিলিয়ে কারুর লিভার বা হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট হলেও অনেকক্ষেত্রেই গ্রহীতার শরীর সেটা মানিয়ে নিতে পারেনা। রোগীর মৃত্যুও হয়।


একইভাবে, সমাজ, জাতি সবারই একটা গঠনতন্ত্র আছে। বিদেশী সংস্কৃতি বা প্রথা সেখানে খুব সহজে প্রবেশাধিকার পায়না। এরকমই একটা বিদেশী সংস্কৃতি হলো হিজাব। মেয়েদের পর্দানশীন রাখা ভারতের সংস্কৃতি নয়। হিন্দুসমাজে পর্দাপ্রথার প্রচলন হয় মুসলিম আক্রমনের পরে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে ভারতের যেসব অঞ্চলগুলি দীর্ঘদিন মুসলিমদের অধীনে ছিল, সেখানেই এই পর্দাপ্রথার প্রচলন ঘটেছে। উত্তর ও পূর্বভারতেই তা প্রধানতঃ সীমাবদ্ধ। স্থানভেদে তার রুপ আলাদা – পাঞ্জাবে দোপাট্টা তো বাংলায় ঘোমটা। 


“এ দেশে মেয়েদের পর্দা নেই, কোনদিনও ছিলনা। উত্তর ভারতের এই ম্লেচ্ছ বর্বরতা মারাঠা দেশ কখনও স্বীকার করে নেয়নি।“ – না, এই কথাগুলি বালাসাহেব ঠাকরে বা কোন তথাকথিত উগ্রহিন্দুনেতার নয়। এ দাবী বাঙলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের। তিনি তাঁর মধুমালতী কাহিনীতে বামন রাওকে দিয়ে এই সত্য প্রকাশ করেছেন। এতে যদি কেউ শরদিন্দুবাবুকে উগ্রবাদী ভাবতে চান তো ভাবতেই পারেন, কিন্তু এতে সত্য বদলাবেনা।


ইসলামে নারীর অবস্থান শুধু ভোগ্যপন্য হিসাবে। নারীদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রতার কোন স্থান সেখানে নেই। তাই নিজের ভোগের জিনিসকে অন্যের থেকে লুকিয়ে রাখার জন্যেই বোরখা ও হিজাবের প্রচলন। তার সৌন্দর্য্য যাতে অন্য কারুর দৃষ্টি আকর্ষন না করে তাই তাকে পর্দানশীন করার চেষ্টা। আর সম্প্রতি কর্ণাটক সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিজাব বিতর্কের সময় এই সাংস্কৃতিক বিভাজন'টা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খোদ এই রাজ্যে বহু তথাকথিত 'সেকুলার'ও হিজাব মেনে নিতে পারেনি আর তাই হিজাব আজও ফরেন এলিমেন্ট।


এই 'ফরেন এলিমেন্ট' তকমা ঘুচিয়ে, হিজাব'কে বাঙালীর পরিচিত ও 'ঘরের জিনিস' করে তোলার লক্ষ্যেই নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে যার প্রমাণ নীচের ছবিতে স্পষ্ট। দোকানে, বাড়িতে বাঙালী যখন নিয়মিত এই শব্দটা দেখবে, সেই শাড়ি কিনবে, পরবে, তখন সেটা নিয়ে তার মানসিক জড়তা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। ঠিক যেভাবে সত্যনারায়ণ'কে সত্যপীর বানিয়ে তার ব্রতকথার শেষে "আমীন" ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বা বনদেবী'কে বনবিবি বানিয়ে দেয়া হয়েছে।


এগুলো হলো সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। আপনার অজ্ঞাতেই আপনার মননশক্তি'কে প্রভাবিত করার প্রয়াস। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বিক্রিত (বিকৃতও বটে) পত্রিকাগোষ্ঠীর পোষ্য সাহিত্যিকরা দীর্ঘদিন ধরেই 'এ বাড়ির সিন্নির সাথে ও বাড়ির ফিরনি'কে মিলিয়ে এসেছেন কিন্তু এতকিছুর পরেও এপারে কালিয়াচক, ধুলাগড়, তেলেনিপাড়া, বাদুড়িয়া এবং ওপারে ব্রাহ্মণবেড়িয়া, নাসিরনগর ইত্যাদি বন্ধ হয়নি। কারণ শরীর হোক সমাজ, ফর্মুলাটা এক - গ্রহীতার মানিয়ে না নিয়ে মৃত্যু অবধারিত।

Thursday, September 21, 2023

মহিলা সংরক্ষণ আইন - উৎসাহ না অপমান?

🔴 ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী। 


🟡 ভারতে দু'জন মহিলা, প্রতিভা দেবীসিং পাটিল ও দ্রৌপদী মূর্মু দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন।


🟢 ভারতের ২৪ জন মহিলা বিভিন্ন রাজ্য/কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের রাজ্যপাল/লেঃ গভর্নর পদে আসীন ছিলেন অথবা আছেন।


🔵 ভারতে ১৬ জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হয়েছেন -

১.    সুচেতা কৃপালনী (উঃ প্রঃ)

২.    শশিকলা কাকোদকর (গোয়া)

৩.    আনয়ারা তৈমুর (আসাম)

৪.    নন্দিনী সতপথী (ওড়িশা)

৫.    মেহবুবা মুফতি (জঃ ও কাঃ)

৬.    শীলা দীক্ষিত (দিল্লি) 

৭.    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (পঃ বঃ)

৮.    মায়াবতী (উঃ প্রঃ)

৯.    রাজিন্দর কৌর ভাট্টাল (পাঞ্জাব)

১০.  জানকী রামচন্দ্রন (তাঃ নাঃ)

১১.  সুষমা স্বরাজ (দিল্লি)

১২.  রাবরী দেবী (বিহার)

১৩.  বসুন্ধরা রাজে (রাজস্থান)

১৪.  জয়ললিতা (তাঃ নাঃ)

১৫.  উমা ভারতী (মঃ প্রঃ)

১৬.  অনাদিবেন প্যাটেল (গুজরাট)


🟠 ভারতে ১০০ জনেরও বেশী মহিলা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদ, বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়ক ও বিধান পরিষদে আসীন আছেন বা ছিলেন।


প্রায় এক দশক ক্ষমতাসীন থাকার পর হঠাৎ একদিন মনে হলো যে রাজনীতিতে মহিলাদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে আর পেশ করা হলো 'নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম' বা মহিলা সংরক্ষণ আইন। শুধু পেশ হওয়া নয়, নতুন আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত প্রথা ভেঙে, সেই বিল সিলেক্ট কমিটিতে না গিয়ে পাশও হয়ে গেল আর সেটাও কোন সংশোধনী ছাড়াই কারণ কোনও দলই লাভের গুড় ছাড়তে বা বিরাট সংখ্যক মহিলা ভোটারদের কাছে অপ্রিয় হতে রাজী নয়।


সংবিধানের এত বড় একটা সংশোধন হয়ে গেল কিসের ভিত্তিতে? এই সংশোধনী পেশ করার আগে সরকার কি রাজনীতিতে মহিলাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নিয়ে কোন সার্ভে করিয়েছিল? ভারত ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশে কি রাজনীতিতে মহিলাদের এত ব্যপক অংশগ্রহণ দেখা যায়? দু'টি প্রশ্নেরই উত্তর হলো - "না"। আধুনিক গণতন্ত্রের পীঠস্থান বলে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত কোন মহিলাকে নিজেদের রাষ্ট্রপ্রধান বলে নির্বাচন করতে পারেনি কিন্তু ভারত সেটা হেলায় একাধিকবার করেছে আর তার একমাত্র কারণ হলো ভারত হিন্দুবহুল দেশ।


হ্যাঁ, কেবলমাত্র হিন্দুবহুল দেশ বলেই রাজনীতিতে মহিলাদের এই অংশগ্রহণ দেশবাসী খোলা মনে মেনে নিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে বহুগুণ বেশী মহিলারা রাজনীতিতে সক্রিয় ও প্রশংসনীয় ভূমিকা নিয়েছেন। কারণ হিন্দুদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কার মানুষের লিঙ্গের ভিত্তিতে বিচার করতে শেখায়না। কিন্তু দেশবাসীর এত সদর্থক মানসিকতার পরেও, প্রায় এক দশক শাসন করার পর, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে নরেন্দ্র মোদী সরকার যখন "রাজনীতিতে মহিলাদের সাথে বৈষম্য"র অজুহাত দিয়ে আইনে বদল করেন তখন সেটাকে হিন্দুদের উদার মানসিকতার প্রতি অপমান ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না।