Wednesday, April 3, 2024

গণতন্ত্র ও কালোপযোগী সিদ্ধান্ত

কোন জাতির উত্থান বা পতনের ক্ষেত্রে বংশগরিমা একটা বড় ভূমিকা পালন করে। আধুনিক বিশ্বের প্রাচীণতম গনতন্ত্র, আমেরিকা তার বংশপরিচয় দক্ষিণ ডাকোটা রাজ্যের রাশমোর পাহাড়ে খোদাই করে রেখেছে আর সেখানে উজ্জ্বল হয়ে আছে তাদের চার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন, টমাস জেফারসন, আব্রাহাম লিংকন ও থিওডর রুজভেল্টের মুখ। অ্যান্টনি হোপসের কাহিনী অবলম্বনে ঝিন্দের বন্দী রচনার সময় শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন লিখেছিলেন যে "নাম দ্বারাই বংশপরিচয় স্বীকার করিলাম" তেমনি এই চার রাষ্ট্রপতির দ্বারাই আমেরিকা স্বীকার করেছে তার পরিচয়। 


ভারতের মত সুবিশাল ও ঐতিহ্যবাহী দেশের ক্ষেত্রে মাত্র চারটি নাম বাছা মুশকিল আর তাই আমি, ব্যক্তিগতভাবে, অন্তত দশ'টি নাম নেবো যারা আমাদের দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পরিচায়ক। শ্রী রাম, শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধদেব, চৈতন্যদেব, গুরু গোবিন্দ সিং, শিবাজি, নেতাজী, বাবাসাহেব আম্বেদকর এবং সর্দার প্যাটেল। 


শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণ নিঃসন্দেহে আমাদের সাংস্কৃতিক পরম্পরার প্রতীক। হিন্দুদের নবম অবতার বলে স্বীকৃত বুদ্ধদেব এতটাই প্রভাবশালী যে তার মহিমা ব্যাখ্যা করা এই অধমের সাধ্যের বাইরে। পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাঁর মতবাদের ব্যপ্তিই তার পরিচায়ক। এরপর আসে ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা চৈতন্যদেব- যার মহিমায় সনাতন ধর্ম পরিচিত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। গুরু গোবিন্দ সিং ও শিবাজি স্বাভাবিকভাবেই আসবেন তাদের স্বাধীনচেতা মনোভাব ও জাত্যাভিমানের কারণে। আর আধুনিক যুগে নেতাজী থাকবেন একটি পরাধীন জাতিকে শুধুমাত্র স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখানো নয়, সেটাকে প্রাপ্তির উপায় দেখিয়ে দেয়ার জন্যে। বাবাসাহেব থাকবেন তার দূরদর্শিতা ও স্বজাতিপ্রীতির কারণে যা শত প্রলোভন সত্ত্বেও তাঁকে ও তাঁর অনুগামীদের কোন বিদেশী মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট করেনি এবং সবশেষে থাকবে সর্দার প্যাটেলের নাম যিনি বিভিন্ন রাজন্যবর্গকে ভারতের অঙ্গীভূত হওয়ার দিশা দেখিয়েছিলেন।


দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এতদিন স্বদেশী ঠাকুর ছেড়ে বিদেশী কুকুরের গুণগান করে গিয়েছি। ১০০০ বছরের পরাধীনতাকে মাত্র ২০০ বছরের পরাধীনতা ভেবে নিয়েছি যেখানে বাস্তব হলো যে ইসলামিক শাসনেও ভারতবর্ষ ততটাই পরাধীন ছিল যতটা ইংরেজ শাসনে। কতিপয় ধান্ধাবাজ লোক ইসলামের বদলে ইংরেজকে বাছার জন্যে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়'কে খলনায়ক হিসাবে দেখাতেই পারেন কিন্তু বাস্তবে সিরাজোদৌল্লার মত লম্পট ও স্বেচ্ছাচারী শাসকের থেকে মুক্তির জন্যে শুধু রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নয়, তার সাথে রাণী ভবানী, জগৎশেঠ, রায়বল্লভ প্রমুখরাও সাথ দিয়েছিলেন কারণ সেই সময় বাঙালী সমাজ আজকের মত মানসিক স্থবিরতায় ভুগতোনা। 


শত অভিযোগ সত্ত্বেও বাম শাসনকে ছুঁড়ে ফেলার জন্যে বর্তমান বাঙালী সমাজের তিন দশকের বেশী সময় লেগেছিল এবং একইভাবে বর্তমান শাসককে ছুঁড়ে ফেলতেও বাঙালী সমাজের দ্বিধা স্পষ্ট। সৌভাগ্যক্রমে, সেই যুগের শাসকবর্গের মধ্যে এই দ্বিধা ছিলনা আর তাই তাঁরা যথাসময়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

No comments:

Post a Comment