Sunday, October 5, 2014

মৃত্যু

মৃত্যু কি, দুঃখ; কষ্ট; যন্ত্রনা, বিরহ? মৃত্যু মানে হয়তো এই সবকটিই কিন্তু সেটা যারা বেঁচে থাকছে তাদের জন্যে। কিন্তু যে মারা যাচ্ছে তাঁর দৃষ্টি দিয়ে দেখলে মৃত্যু কি শুধু বেদনাতেই আবদ্ধ? জীবনটাকে যদি একটা সুন্দর স্বপ্ন বলে ভাবি, তাহলে মৃত্যু কি তার থেকে জাগরণ নয়? এই মহাবিশ্বের মহাকালের প্রেক্ষিতে আমাদের জীবনকালের সত্তর-আশিটা বছর কতটাই বা মূল্য রাখে?

জীবন মানে যদি চেতনা হয়, তাহলে এই জগতের কতটুকু আমাদের চেতনার অধীন?আমাদের চেতনা তো আমাদের পঞ্চেন্দ্রিয়ের অনুভূতির মুখাপেক্ষী। বিশ্বচরাচর কি এই ক্ষুদ্র পরিসরে পরিমাপযোগ্য? পঞ্চভূতের বিভিন্ন অনুপাতে সৃষ্ট আমাদের এই নশ্বর দেহ যে প্রকৃতির অংশবিশেষ, তার বিশালত্বের কতটা আমরা জীবিত বা চেতন অবস্থায় অনুভব করতে পারি? আমাদের চেতনার পরিসরের বাইরেও যে এক বিরাট অতিচেতন জগৎ বিরাজ করছে; জীবিত অবস্থায় আমরা ক’জন সেটা অনুভব করি?

মৃত্যু মানে কি সেই চেতন জগৎ-র গণ্ডি পেরিয়ে অতিচেতনের উদ্দেশ্যে যাত্রা নয়? জীবিতাবস্থায় লৌকিক নিয়মের নাগপাশে আবদ্ধ আমাদের বোধশক্তিকে মৃত্যু কি মুক্ত করে দেয়না? “তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই-- কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই” – কাকে উদ্দেশ্য করে কবিগুরু এই রচনা করেছেন? কোন শক্তির কাছে কবিগুরু নিজের প্রাণমন অর্পণ করেছেন? আমরা চেতনকালে ষড়রিপুর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যে শক্তি ও তাঁর বিশালত্বকে উপলব্ধি করতে পারিনা, কবিগুরু তাঁর আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে সেই বিশালত্বেকে অনুধাবন করে সেই শক্তিরই বন্দনা করেছেন। 
 
চেতনার জগৎকে অতিক্রম করে অতিচেতনার জগৎকে অনুভব করার সুযোগ মৃত্যু সকলকেই দেয় – কাউকে আগে তো কাউকে পরে। আর যারা জীবিতকালেই সেই অতিচেতনার জগৎকে অনুভব করতে পারে তাঁরাই আদি শঙ্করাচার্যের মত উদাত্ত কন্ঠে বলতে পারে –  
“ন মে মৃত্যু শঙ্কা ন মে জাতিভেদা, (আমার মৃত্যুভয় নেই, জাতিভেদ নেই) 
পিতা নৈব মে নৈব মাতা নাঃ জন্মা, (পিতা নেই, মাতা নেই, আমার কখনো জন্মই হয়নি) 
না বন্ধুর না মিত্রম গুরুর নৈব শিষ্যা, (আত্মীয় নেই, বন্ধু নেই, গুরু বা শিষ্য নেই) 
চিদানন্দরুপ শিবহম শিবহম। (আমি হলাম পরম সত্বা, আমিই হলাম শাশ্বত শিব) 
 
অহং নির্বিকল্প নিরাকার রুপ, (আমার ভিন্ন সত্বা নেই, কোন আকার নেই)
বিভুত বাচ্য সর্বত্র সর্বেন্দ্রিয়ানাম, (আমি সর্বত্র বিরাজ করি, সকল অনুভূতি আমাতেই) 
ন চ সংগঠন নৈব মুক্তির না মেয়া (আমি যুক্ত নই, মুক্ত নই, বদ্ধ নই) 

চিদানন্দরুপ শিবহম শিবহম। (আমি হলাম পরম সত্বা, আমিই হলাম শাশ্বত শিব)

No comments:

Post a Comment