Sunday, October 5, 2014

ধর্মযুদ্ধ

মহাভারতের শল্য পর্ব- কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আঠারোতম তথা শেষ দিন। দুর্যোধন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে সরোবরের নিচে লুকিয়ে আছে। তাকে খুঁজতে খুঁজতে শ্রীকৃষ্ণ ও ধৃষ্টদুম্ন্য সহ পঞ্চপাণ্ডব সেখানে উপস্থিত হয় এবং ভীম দুর্যোধন কে গদাযুদ্ধের আহবান জানায়। এমন সময়  শ্রীকৃষ্ণ-র দাদা বলরাম তাঁর তীর্থযাত্রা সেরে সেখানে এসে পৌঁছান।  ঘটনাচক্রে ভীম এবং দুর্যোধন দুজনই তাঁর গদাযুদ্ধের শিষ্য ছিল সুতরাং তাঁকে যুদ্ধের বিচারক হিসেবে মেনে নিতে কেউই আপত্তি করলনা।

অতঃপর গদাযুদ্ধ শুরু হল। বেশ কিছুক্ষণ সমানে সমানে লড়াই চলার পর যুদ্ধের গতি ধীরে ধীরে দুর্যোধনের  পক্ষে যেতে লাগল। ভীম ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ হারাতে লাগল। এমন সময় শ্রীকৃষ্ণ ভীমকে হস্তিনাপুর রাজসভায় করা  তার প্রতিজ্ঞা মনে করিয়ে দিতে নিজের জঙ্ঘার দিকে ইঙ্গিত করলেন। এরপর, ভীম গদাযুদ্ধের নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে সজোরে দুর্যোধনের জঙ্ঘাতে আঘাত করে এবং তাকে ধরাশায়ী করে ফেলে।  

গদাযুদ্ধের নিয়ম অনুসারে লড়াইয়ের সময় কাউকে কোমরের নিচে আঘাত করা যায়না কিন্তু সেই নিয়মের পালন না করে ভীমের এই প্রহারে বলরাম অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন এবং ভীমকে আক্রমণ করতে আসেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ এগিয়ে এসে বলরামকে প্রতিহত করেন এবং তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেন। শ্রীকৃষ্ণ বলেন- আজ ভীমের আক্রমণের ঔচিত্য নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করা বলরাম তখন কেন নীরব ছিলেন যখন হস্তিনাপুর রাজসভায় কূলবধূ দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করা হয়েছিল? তখন কেন নীরব ছিলেন যখন জতুগৃহে পাণ্ডবদের পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করা হয়েছিল? তখন কেন নীরব ছিলেন যখন অভিমন্যুকে সপ্তরথী মিলে একসাথে অন্যায় যুদ্ধে হত্যা করেছিল? একপক্ষ বিনা প্রতিবাদে একের পর এক অন্যায় করেই যাবে আর তাদের বিরুদ্ধে অপরপক্ষ ক্রমাগত নীতি মেনে লড়াই চালাবে এটা কী ধরনের ন্যায়? এরপর শ্রীকৃষ্ণ বলরামকে ভৎর্সনা করে বলেন যে, কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধ শুরু হবার আগে যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধন দুজনই তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নিজ নিজ পক্ষে যোগদান করার জন্য। কিন্তু তিনি সেই সময় কোন পক্ষেই যোগ না দিয়ে তীর্থভ্রমণে বেরিয়ে যান। দেশে যখন ধর্ম আর অধর্মের মধ্যে লড়াই হচ্ছে তখন সেই যুদ্ধে কেউ নিরপেক্ষ থাকতে পারেনা, হয় সে ধর্মের পক্ষে অথবা অধর্মের। তখন যুদ্ধক্ষেত্রই একমাত্র তীর্থক্ষেত্র।  


আজ পশ্চিমবঙ্গে আবার কি সেই ধর্ম আর অধর্মের মধ্যে লড়াই-র পথে এগিয়ে চলছেনা? জেহাদি সন্ত্রাস একের পর এক অন্যায় করেই চলেছে আর আমরা চোখে ধর্মনিরপেক্ষতার ঠুলি এঁটে শান্তির হাঁপু বাজিয়ে চলেছি। কামদুনি, মধ্যমগ্রাম সহ সারা রাজ্যে কত শত বোনের সম্মান দ্রৌপদীর মত লুণ্ঠিত হচ্ছে। বনগাঁর দীপঙ্করের মত কত শত যুবক অভিমন্যুর মত জেহাদি সপ্তরথীদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ক্যানিং, পাঁচলা  সহ পশ্চিমবঙ্গের কত গ্রাম জিহাদি আগুনে বারনাবরতের জতুগৃহের মত পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আর আমরা পুণ্য করতে গঙ্গাসাগরে গিয়ে ডুব দিচ্ছি বা মন্দিরে মন্দিরে পূজা দিচ্ছি যাতে “ঠাকুর রক্ষা করেন”। কিন্তু ইতিহাস বলছে যে ঠাকুর আমাদের ১৯৪৭এ রক্ষা করেননি। জেহাদি সন্ত্রাসের সামনে নিজেদের বাপ-ঠাকুর্দার ভিটে ছেড়ে, মা-বোনেদের ইজ্জত খুইয়ে আমরা উদ্বাস্তুর হয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। ধর্মনিরপেক্ষতার মেকি বুলি আমাদের কোন রকম নিরাপত্তা দিতে সেদিনও পারেনি আর আজও পারছেনা। কারন আমরা ভুলে গেছি যে ঠাকুর নিজে বলেছেন যে “যখন ধর্ম আর অধর্মের মধ্যে লড়াই হচ্ছে তখন যুদ্ধক্ষেত্রই একমাত্র তীর্থক্ষেত্র”। 

No comments:

Post a Comment