Monday, January 26, 2015

বাঙ্গালী হিন্দুর ভবিষ্যৎ

আমাদের অফিসে বেশ কয়েকটা রোডেশিয়ান কুকুর আছে। তাদের বিরুদ্ধে জারি করা HR-র নিয়মিত ফরমানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মা ষষ্টির কৃপায় তারা প্রতি বছর বেশ বংশবৃদ্ধিও করে চলেছে। অফিসের অনেকেই তাদের (প্রকাশ্যে বা আড়ালে) নিয়মিত খেতেও দেয়। HR যতই circular জারী করুক, তারাও তো কৃষ্ণের জীব। এরকমই একটি কুকুর লাঞ্চটাইমে নিয়মিত আমাদের ডিপার্টমেন্টের সামনে হাজিরা দেয়। তার নাম আমরা রেখেছি হ্যালো। আমাদের ডিপার্টমেন্টের দুজন বন্ধু তো তাকে নিয়মিত খেতেও দেয়।

রোজকারমত আজও আমি খাওয়া শেষ করে বাইরে বসে ধূমপান করছি, বাকিদের খাওয়া তখনও শেষ হয়নি, এমন সময় হ্যালো এসে হাজির। আমাকে বাইরে দেখেই সে তার পতাকা নাড়াতে নাড়াতে গুটি গুটি পায়ে আমার কাছে ঘনিয়ে আসলো। আমি তার মাথায় হাত বোলাতে সে চোখ বুজে আদর খেতে লাগলো। এমনসময় সেই দুই বন্ধুর একজন দরজা খুলে বেরোতেই হ্যালো আমাকে ছেড়ে একছুটে নিজের খাবার জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো। এরপর, একে একে দুইজনের দেয়া খাবার শেষ করে সে আবার আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। বুঝলাম, খিদের মত মূল চাহিদা অপূর্ণ রেখে আদর খেয়ে পেট ভরানো যায়না।


আমরা বলি সকল প্রানীদের মধ্যে মানুষ হল সবচেয়ে উন্নত প্রজাতি কারণ তারা চিন্তাশীল এবং যুক্তিবোধ দ্বারা চালিত। অন্যান্য প্রানীদের মত তারা প্রবৃত্তির অধীন নয়। কিন্তু প্রবৃত্তির নিবৃত্তি না হলে কি সত্যিই চিন্তাশীল হওয়া যায়? রোটি, কাপরা আউর মকান-এর মত মূল সমস্যার সমাধান না হলে মানুষ কি মৌলিক চিন্তার শরিক হতে পারে? বিশ্বের ইতিহাসের ধারা ভাল করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে যেসব জাতি যখন দার্শনিক চিন্তাভাবনার তুঙ্গে উঠেছে তারা তার পূর্বেই আর্থিক সমৃদ্ধিরও শীর্ষস্থান দখল করেছে। ঠাকুর যথার্তই বলেছিলেন, “খালি পেটে ধর্ম হয়না”।

ধান ভাঙতে গিয়ে শিবের গীতটা কি একটু বেশীই গেয়ে ফেললাম? নিজের ‘হিন্দুত্ববাদী’ পরিচয়টা সম্পর্ক্যে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থেকেও আজ মনে প্রশ্ন জাগছে, হিন্দুত্ব, নিঃসন্দেহে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম কিন্তু হিন্দু ছাড়া এই ধর্মের অস্তিত্ব আছে কি? আজকের দিনে অতিবড় হিন্দুত্ববাদীও কি হিন্দুশুণ্য স্থানে হিন্দুত্বের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারেন? তাই, মহান এই হিন্দুত্বকে সযত্নে লালন করার জন্যে কি হিন্দুদের অস্তিত্ব বজায় রাখাও অনুরূপ প্রয়োজন নয়? আর হিন্দুদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্যে কি তাদের মূল চাহিদাগুলির পরিপূরণ একান্তই দরকারি নয়?

কিন্তু কই, আজকের দিনে আমাদের এই রাজ্যে, হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ব্যগ্র ব্যক্তি বা সংগঠনগুলির মধ্যে তো হিন্দুদের এই ন্যুনতম চাহিদাপূরণের জন্যে অনুরূপ আকুতি দেখিনা। একমাত্র ব্যাতিক্রম অবশ্যই হিন্দু সংহতি। কিন্তু বাকিরা এই বিষয়ে নিরাসক্ত কেন? পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গ্রামে হিন্দুরা যখন জিহাদি আক্রমণের ফলে নিজেদের বাড়ি, জমি, পুকুরের দখল হারাচ্ছে, তাদের ঘরের মেয়েদের সম্মান খোয়াচ্ছে, কই তখন তো হিন্দু সংহতি ছাড়া আর কেউ গিয়ে তাদের পাশে দাড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছেনা। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই লড়তে ব্যস্ত হিন্দুদের কাছে প্রাথমিক প্রয়োজন কোনটা, এই লড়াইয়ে জয়লাভ নাকি হিন্দুত্বের তাত্বিক বুলি?

অবশ্য কেউ বলতেই পারেন যে প্রত্যেককে নিজের লড়াই নিজেকেই লড়তে হয়। স্বয়ং প্রভুপুত্র বলে গিয়েছেন যে One has to bear one’s own cross কিন্তু সেক্ষেত্রে মনে প্রশ্ন জাগে যে তাহলে সংগঠনের কি দরকার? প্রতিটা গ্রামের হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষা করার দায় যদি শুধু তাদেরই হয় তাহলে রাজ্য বা দেশব্যাপী সংগঠন থাকার প্রয়োজনটা কি? তাছাড়া স্বয়ং প্রভুপুত্রকেও তো তার কথার জবাবও সেন্ট ভেরোনিকা তৎক্ষণাৎই দিয়েছিলেন, আমি আপনার ক্রসের ভার না বইতে পারি কিন্তু আমার আঁচল দিয়ে আপনার কপালের ঘামটা তো মুছিয়ে দিতে পারি। আজকের দিনে আমাদের রাজ্যে হিন্দু সংহতি ছাড়া আর কোন সংগঠন নেই যারা অন্ততঃ সেন্ট ভেরোনিকার ভুমিকাটাও পালন করতে পারে?

1 comment:

  1. Apnar lekha pore valo laglo. Apnar lekhar modhye bastobadita susposhto. Bangali Hindu ke rokkha korte hole ekta social-economical-cultural revolution shuru kortei hobe. Sarasori dhormer kotha bole ato manush ke akjot kora asamvab.

    ReplyDelete