Friday, May 20, 2022

ধার্মিক

জেহাদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে, হিন্দুদেরও মুসলমানদের অনুকরণ করা জরুরী নয়। প্রত্যেকটা জাতির মানসিকতা, অভ্যাস, গঠন আলাদা। এক জাতির কাঠামো, আরেকজনের উপর বসিয়ে দিলে সেটা খাপ খায়না। যারা ভাবেন যে হিন্দুরা গন্ডা গন্ডা বাচ্চা প্রসব করলে জেহাদি প্রতিরোধ গড়ে উঠবে, আমি তাদের সাথে সহমত নই। যারা মুসলমানদের কাছে অত্যাচারিত হিন্দুরা কেন তাদের অত্যাচার নিয়ে সোচ্চার হননা বলে প্রশ্ন তোলেন, আমি তাদের প্রতি করুণা প্রকাশ করি।


আচ্ছা, বলুন তো, ভারত আর পাকিস্তানের লড়াই নিয়ে কত দিবস, কত সিনেমা তৈরী হয়েছে কিন্তু ভারত আর চীনের যুদ্ধ নিয়ে ক'টা দিবস বা ক'টা সিনেমা হয়েছে? না, ব্যর্থতাকে কেউ সেলিব্রেট করেনা। এই কয়েকদিন আগে, ডোকলাম নিয়ে চীনের সাথে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সেটার সমাধানেরও কোন দিবস পালন করা হয় কি? না, সমঝোতার মাধ্যমে লব্ধ বিষয়ে উল্লাস করা যায়না। এই কারণেই মুসলমানদের কাছে অত্যাচারিত হিন্দুরা তাদের অত্যাচার নিয়ে নীরব। পরাজয়ের কথা বুক ফুলিয়ে বলা যায়না।


একইভাবে, যারা মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে রোখার জন্যে হিন্দুদেরও গন্ডা গন্ডা বাচ্চা নিতে উৎসাহ দেন, তাদের সেই মানসিকতাকেও আমার অন্ধ অনুকরণ ছাড়া আর কিছু মনে হয়না। ভারতবর্ষ মুসলমানদের নয়, হিন্দুদের। মুসলমানরা এদেশে এসেছিল আক্রমণকারী হিসাবে, লুট করতে। তাই এই দেশের প্রতি তাদের কোন মমত্ব নেই। কিন্তু হিন্দুদের সেটা আছে। ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা যেখানে ইতিমধ্যেই ১৩০ কোটি পার হয়ে গেছে আর রিসোর্স সীমিত - সেখানে, নেতাদের খিদে মেটানোর পর, নিয়ন্ত্রণহীন জনসংখ্যার প্রয়োজন কতটা মেটানো সম্ভব হবে?


ইসলামি আগ্রাসনের সামনে হিন্দুদের ব্যাকফুটে থাকার একমাত্র কারণ হল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হিন্দুরা ইসলামকে বিপদ বলে মনে করেনা। যেখানে হিন্দুদের সংখ্যা বেশী, সেখানে তারা মুসলমানদের ত্বাকিয়ার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে থাকে আর এইভাবে আস্তে আস্তে যখন দুই পক্ষই সমান সমান অবস্থায় আসে, তখন তারা আপোষ করা শুরু করে আর মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলেই, অনিবার্য পরিণতি হিসাবে এলাকা ত্যাগ করে। এই প্রবণতা দিনের পর দিন, এলাকার পর এলাকায় ঘটে চলেছে কারণ হেরে যাওয়ার গ্লানি সবাই লুকাতে চায়।


এমতাবস্থায় যারা ভাবছেন যে শুধু সমাজের তথাকথিত নিম্নবর্গের মাধ্যমে এই আগ্রাসনকে প্রতিহত করা যাবে, তাঁরা, আমার মতে, বাস্তব সম্পর্কে অবহিত নন। ইসলামিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই মোটেই একমুখী নয় যে কুরুক্ষেত্রের মত এসপারওসপার হয়ে যাবে। এই লড়াই যতটা মাটিতে হবে, ঠিক ততটাই হবে বৌদ্ধিক জগতে। এই লড়াইয়ে রাজনৈতিক দলগুলি সহ তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনকে - নিজেদের স্বপক্ষে আনতে না পারলেও অন্তত নিস্ক্রিয় রাখতে হবে - যেটা ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময়, মোদী অনেকাংশেই করেছিলেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, গুজরাট দাঙ্গার সময়, মোদী মোটেই গোধরাতে রেলের কামরা জ্বালিয়ে করসেবকদের পুড়িয়ে মারা এবং সেটাতে উল্লাস প্রকাশ করা জেহাদীদের উপর আক্রমণ করেননি, সেই কাজ গুজরাটের হিন্দুরাই করেছিল। মোদী শুধু কিছু সময়ের জন্যে প্রশাসনকে নিস্ক্রিয় করে রেখেছিলেন যাতে বিচারের সাম্যতা বজায় থাকে।


ইসলামিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু 'ব্লু কলার' বা 'কলারলেস'দের দিয়ে হবেনা, এই লড়াই করার জন্যে সমাজের 'হোয়াইট কলার'দের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা অনিবার্য। যারা এই সত্যকে অস্বীকার করে, শুধু তথাকথিত নিম্নবর্গের দ্বারা এই কাজ করতে চাইছেন, তাদের সাফল্য নিয়ে আমার সংশয় আছে। কারণ প্রশাসনিক জাড্যতা ও আইনি বাধার বিরুদ্ধে তাদের শক্তি এতটাই ক্ষয় পায় যে অনেক সময়ই মূল লক্ষ্য থেকে দৃষ্টি সরে যায়। সমাজ রক্ষার, ভবিষ্যৎ রক্ষার দায় যে গোটা সমাজের, এই বোধ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যেই আসতে হবে। হিন্দুদের একজোট হওয়ার জন্যে ধর্ম ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। তাই সমাজ রক্ষার এই কাজ যে হিন্দুদের ধার্মিক কর্তব্য, এই উপলব্ধি হিন্দুদের মধ্যে আসা দরকার। 


এখানে ধর্ম মানে রিলিজিয়ন নয়, ধর্ম মানে দায়িত্ব, কর্তব্য। ঈশ্বরে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস, যাগযজ্ঞাদি, পূজার্চনা করা বা না করার সাথে মানুষের সামাজিক কর্তব্যের বা ধর্ম পালনের কোন সম্পর্ক নেই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, বাজপেয়ী'র সৌজন্যে যেমন 'রাজধর্ম' শব্দটি বহুল পরিচিতি লাভ করেছে এবং সেখানে রাজধর্ম মানে মোটেই শাসকের পূজার্চনার কথা বোঝানো হয়নি, বরং তার কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। একইভাবে, পুত্রধর্ম, ছাত্রধর্ম, পিতাধর্ম, শিক্ষকধর্ম ইত্যাদি দ্বারাও প্রত্যেক ক্ষেত্রের ব্যক্তিদের দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। ঠিক এইভাবেই থাকে নাগরিক দায়িত্ব যা তার ধর্ম আর এই ধর্ম যে ঠিকভাবে পালন করে সেই ধার্মিক।

1 comment:

  1. অসাধারণ বিশ্লেষণ দাদা।প্রণাম নেবেন।

    ReplyDelete